‘পুলিশের লাঠিচার্জে মাথার পিছন দিকে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন আবু সাঈদ। এছাড়া দুই দফায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি’ -প্রত্যক্ষদর্শী ইমরান আহমেদ এ কথা বলেন। গতকাল বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় প্রসিকিউশনের ১৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীকে পরে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।
এদিকে রামপুরার ঘটনায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আরও তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রথমে প্রসিকিউশনের নবম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ফিল্ড অফিসার এএসআই মো. বায়েজীদ খাঁন জবানবন্দি দেন। পরে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষী রামপুরা থানার এসআই মো. শাহিন মিয়া এবং একাদশতম সাক্ষী নার্স লিংকন মাঝি সাক্ষ্য দেন।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় জবানবন্দিতে রংপুর কারমাইকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ বলেন, ‘গত বছর ১৬ জুলাই আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট (বর্তমানে আবু সাঈদ গেট) এর কাছাকাছি পৌঁছাই। আনুমানিক ২টার দিকে প্রথমে পুলিশ আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা বাধা উপেক্ষা করে স্লোগান দিতে থাকি। একপর্যায়ে কোনো রকম সতর্ক বার্তা ছাড়াই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা শুরু করে এবং অতর্কিতভাবে লাঠিচার্জ করা শুরু করে। সে সময়ে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্বিদিকে ছোটাছুটি করে। এ সময় অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ মাথার পেছন দিকে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং রক্ত পড়া শুরু হয়।’
জবানবন্দিতে সাক্ষী আরও বলেন, ‘আমাদেরকে আক্রমণকারী পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের ভিতরে অবস্থান নেয় এবং ভিতর থেকে গেট বন্ধ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আগে থেকে অবস্থান নিয়েছিল। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কোনো ভূমিকা রাখে নাই বা অবৈধভাবে অবস্থানরত বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে নাই। বরং প্রক্টর ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর চলে যায়।’
জবানবন্দিতে ইমরান বলেন, ‘আনুমানিক দুপুর ২টার পরে আমাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি অংশ গেট খোলার চেষ্টা করে। তখন ভিতরে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এবং পুলিশ কর্মকর্তারা সবাই মিলে ভিতর থেকে ছাত্রদের উদ্দেশে ঢিল ছোড়ে। পুলিশ কর্মকর্তারা ভিতর থেকে গুলি করতে করতে বেরিয়ে আসতে থাকে। তখন গেটের সামনে অবস্থান করা ছাত্ররা আবারও ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি শুরু করে। এ অবস্থায় আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যায় এবং গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সামান্য একটু পিছিয়ে গেলে আবারও গুলিবিদ্ধ হয়। তখন আবু সাঈদ ডিভাইডার পার হয়ে একটু পিছনে আসে। আরেকটু পেছনে থাকা আয়ান এগিয়ে এসে আবু সাঈদকে ধরে। তারপর একটু সরে যাওয়ার পর সাজু রায়সহ আরও কয়েকজন আবু সাঈদকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা আনুমানিক এক ঘণ্টা পরে খবর পাই যে, হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেনে।’ যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে, সহযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সবার শাস্তি দাবি করেন এই সাক্ষী।