লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে আবারও ভয়াবহ নৌকাডুবির খবর পাওয়া গেছে। এতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দুই যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। একই উপজেলার আরও ছয় যুবক এখনো নিখোঁজ। ভিকটিম পরিবারে চলছে মাতম। নিহতদের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
জানা গেছে, দালালের মাধ্যমে প্রায় ২১ লাখ টাকা খরচ করে গত অক্টোবরে ইতালির উদ্দেশে অবৈধভাবে লিবিয়া যান মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষির ইউনিয়নের পশ্চিম লখন্ডা গ্রামের আকোব আলী শেখের ছেলে এনামুল শেখ এবং একই গ্রামের জাহিদ শেখের ছেলে আনিস শেখ। ১৩ নভেম্বর রাতে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়ার আল-খুমস উপকূলে দুটি নৌকা ডুবে যায়। এর একটিতে ছিলেন ২৬ বাংলাদেশি। ঘটনার পর চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী কয়েক দিন তথ্য সংগ্রহের পর পরিবারগুলো নিশ্চিত হয় এনামুল ও আনিস নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় মুকসুদপুর উপজেলার পশ্চিম লখন্ডা ও কাশালিয়া ইউনিয়নের ছয় যুবক এখনো নিখোঁজ। তারা হলেন আওলাদ শেখের ছেলে ইব্রাহিম শেখ, হায়দার শেখের ছেলে আবুল শেখ, ইকরাম মীনার ছেলে দুলাল মীনা, হায়দার মীনার ছেলে আশিক মীনা, খালেক মোল্যার ছেলে সোহেল মোল্যা এবং গুনহর গ্রামের হাফিজ মীনার ছেলে নিয়াজ মীনা। ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বজন, প্রতিবেশী এবং সাধারণ মানুষের ভিড়ে শোকে ভেঙে পড়ে নিহত ও নিখোঁজদের পরিবার।
এ ঘটনার পর স্থানীয়রা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দালাল চক্র প্রতারণা করে এলাকার অসহায় মানুষকে অবৈধ পথে ইউরোপ পাঠাচ্ছে। ননীক্ষির ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর মোল্যা বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে যুবকদের বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। পরিবারগুলো জমি বিক্রি করে টাকা দেয়। অবৈধ পথে সমুদ্রপথে যাওয়াই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তবু চাকরি আর বেঁচে থাকার লড়াই তাদের বাধ্য করছে। মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, নিহত দুজন ও নিখোঁজদের বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উচ্চ পর্যায়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে। অনেকেই মনে করেন বিদেশ গমনসংক্রান্ত সচেতনতা, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং বিদেশে বৈধ অভিবাসন সুযোগ বাড়ানো ছাড়া এ মৃত্যুমিছিল থামানো যাবে না। আরও ছয়জন নিখোঁজ থাকায় পরিবারগুলো এখনো অপেক্ষায় রয়েছে। কেউ জীবিত ফিরবে, নাকি ফিরবে লাশ, সেই অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে তারা।