২৬ জুলাই, ২০১৬ ১২:৩০

ক্যান্সার : প্রতিরোধের উপায়

অনলাইন ডেস্ক

ক্যান্সার : প্রতিরোধের উপায়

ক্যান্সার সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি জানি। এটা এক ধরনের রোগ, যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় ম্যালিগন্যান্ট নিওপ্লাসম। ম্যলিগন্যান্সি তখনই হয়, যখন কোষ বিভাজনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে সেটা বেশি আকারে হতে থাকে।

ক্যান্সার হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে ক্যান্সার প্রতিরোধ একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলা যেতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব?

ক্যান্সার প্রতিরোধ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে সম্ভব যদি নিয়ম মেনে সঠিকভাবে জীবনযাপন করা যায়।
১. ধূমপান থেকে বিরত থাকা
ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হলে অ্যাকটিভ এবং প্যাসিভ—দু'ভাবেই বিরত থাকতে হবে। অ্যাকটিভ ধূমপান বলতে নিজে ধূমপান করা, আর প্যাসিভ ধূমপান বলতে অন্য ধূমপায়ীদের সঙ্গে থাকার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবছর তামাকজাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের জন্য ৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। অন্যভাবে বলতে গেলে, প্রতি ৬ সেকেন্ডে মৃত্যু ঘটছে একজন মানুষের তামাক ব্যবহারের কারণে। পৃথিবীতে যত ধরনের ক্যান্সার হয়, তার এক-চতুর্থাংশের কারণই হচ্ছে ধূমপানসহ তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন।

যেসব ক্যান্সার হয়ে থাকে; শুধু ফুসফুসের ক্যান্সারই নয়, এর সঙ্গে মুখ, শ্বাসনালি, নাক, সাইনাস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, জরায়ু, কিডনি, লিভারের ক্যান্সার হতে পারে!

কেন হয়
ধূমপানের জন্য নানা ধরনের কারসিনোজেন (এমন মলিকিউল যা কিনা কোষের জেনেটিক ম্যাপ পরিবর্তন করে ক্যন্সার সৃষ্টি করে) থাকে। তাছাড়া নানা ধরনের ফ্রি র্যাডিকেলের (যেমন, সুপার অক্সাইড) মাধ্যমেও এমনটা হতে পারে।
সুতরাং নিজের, পরিবারের এবং বন্ধু-বান্ধবদের জন্য ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন এবং অন্যকে বিরত থাকতে বলুন!

২. অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা
ধূমপান যেমন শরীরে নানা ধরনের ক্যান্সারের সৃষ্টি করে, ঠিক তেমনভাবেই অ্যালকোহল শরীরের নানা স্থানে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে থাকে।
কী কী ক্যান্সার হয়ে থাকে : মুখ, লিভার, ইসোফেগাস, ব্রেস্ট, ফ্যারিংস।

৩. বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন
বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনও ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের অনেক ইনফেকশন যদি সঠিক সময়ে চিকিত্সা করা হয়, তবে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন : হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ব্যাক্টেরিয়ার ইনফেকশনের জন্য পাকস্থলীতে ক্যান্সার হতে পারে।
ভাইরাল ইনফেকশন : হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, এপস্টিন-বার ভাইরাস, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, ক্যাপোসি সারকোমা হার্পিস ভাইরাসের জন্য ক্যান্সার হতে পারে।
কী করণীয় : যে কোনো ধরনের ইনফেকশনের জন্য দ্রুত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিত্সা গ্রহণ করতে হবে এবং রেগুলার ফলো আপে থাকতে হবে!

৪. অতি বেগুনি (আল্ট্রা ভায়োলেট)
রশ্মি থেকে দূরে থাকা
আল্ট্রা ভায়োলেট রে সূর্যের আলোতে বিদ্যমান, এই রশ্মির কারণে তা ত্বকের কোষের নিউক্লিয়াসে পরিবর্তন ঘটিয়ে ত্বকে ক্যান্সার তথা স্কিন ক্যান্সার করে থাকে। অবশ্য এই ক্যান্সার আমাদের তুলনায় ককেশিয়ান তথা সাদা চামড়ার লোকদের ভেতর বেশি দেখা যায়। তার পরও সূর্যের আলোর প্রখরতা বেশি হলে সরাসরি সেই আলোতে না থাকাটাই উত্তম।

৫. পরিমিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ
আমাদের খাদ্যতালিকার ভেতর অনেক খাবারই অ্যান্টি ক্যান্সারাস উপাদান বহন করে (যেমন টমেটো), তাই পরিমিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব।

৬. নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব। ব্যাপারটা শুনতে কিছুটা অদ্ভুতও বটে—ব্যায়াম কিনা করবে ক্যান্সার প্রতিরোধ! নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে আমাদের ইমিউনিটির কোষ সতেজ থাকে আর এই কোষগুলোই আমাদের শরীরে কোনো ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হলে তা ধ্বংস করে থাকে!

৭. মধ্য বয়সের পর থেকে নিয়মিত চিকিৎসকের ফলো আপে থাকা
অনেক সময় ক্যান্সার হলে তা যদি দ্রুত ডায়াগনোসিস করা যায়, তাহলে চিকিত্সা করে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। তাই মধ্য বয়সের পর থেকে নিয়মিত চিকিৎসকের ফলো আপে থাকা উচিত।

বিডি প্রতিদিন/ ২৬ জুলাই ২০১৬/ সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর