অনেকেই থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন। সমস্যা হল, শুধু থাইরয়েড বেড়ে যাওয়াতেই অসুখ আর সীমাবদ্ধ নেই। পাশাপাশি, থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যানসারও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার চিকিৎসা কী ভাবে সম্ভব, তা জানার আগে জেনে নিতে হবে আরও কয়েকটি বিষয়। জেনে নিতে হবে থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যানসারের লক্ষণ আর রিস্ক ফ্যাক্টরও। নইলে চিকিৎসার সূত্রটি অধরা থেকে যাবে।
থাইরয়েড ক্যানসার হয় থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে। থাইরয়েড গ্ল্যান্ড আমাদের স্বরগ্রন্থির নিচে থাকে। এই গ্ল্যান্ড খাবার থেকে আয়োডিন নিয়ে শরীরে থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে। যখন থাইরয়েড গ্রন্থির কোষ সাধারণ অবস্থার থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে ও অন্যান্য অঙ্গের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে বলা হয় থাইরয়েড ক্যানসার।
লক্ষণ:
প্রাথমিক পর্যায়ে থাইরয়েড ক্যানসারের সে ভাবে কোন লক্ষণ দেখা যায় না। রুটিন চেক আপ-এ অনেক সময় ক্যানসার ধরা পড়ে। যখন টিউমার বড় আকারের হয়, তখন বোঝা যায়। এছাড়া নিম্নলিখিত কিছু লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
• গলায় হঠাৎ কোন মাংসপিণ্ড দেখা দেওয়া।
• শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
• গলার আওয়াজ বসে যাওয়া।
• খেতে কষ্ট হওয়া।
রিস্ক ফ্যাক্টর:
• ২৫-৫০ বছর বয়সিদের এই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
• পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের রিস্ক বেশি।
• দীর্ঘদিন ধরে গয়টার বা থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে থাকলে থাইরয়েড ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।
• পরিবারে কারও যদি থাইরয়েড ডিজিজ বা থাইরয়েড ক্যানসার হয়, তবে অন্যদের থাইরয়েড ক্যানসারের প্রবণতা থাকে।
• ক্রনিক হেপাটাইটিস সি থেকে থাইরয়েড ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।
চিকিৎসা:
• গলায় টিউমার বা ছোট মাংসপিণ্ড দেখা গেলে উপেক্ষা না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কেন না, গলায় মাংসপিণ্ড দেখা দিলে প্রথম অবস্থায় কোন লক্ষণ দেখা যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যথা বা কষ্ট হয় না। তাই এই লক্ষণ দেখলে অবহেলা না করে এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
• ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে T4 TSH রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। রক্ত পরীক্ষা করার পর হাই রেজোলিউশন আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট করাতে হবে।
• আল্ট্রাসাউন্ড করার পর যদি দেখা যায় তার মার্জিন অস্বাভাবিক, টিউমারের মধ্যে কোষের সংখ্যা ফ্যাটের তুলনায় বেশি ও ছোট ছোট ক্যালসিয়াম জমে আছে, সেক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।
• ক্যানসারই কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য করাতে হবে আল্ট্রাসাউন্ড গাইডেড ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন টেস্ট। এই টেস্টেই থাইরয়েড ক্যানসার আছে কি না, তা সঠিক ভাবে জানা যায়।
• কিছু ক্ষেত্রে ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন টেস্টে ক্যানসার পাওয়া যায়। অনেক সময় আবার ক্যানসার না হলেও সন্দেহ করা হয়-
সেক্ষেত্রে করণীয়:
• ক্যানসার ধরা পড়ুক বা সন্দেহের পর্যায়ে থাক, দুই অবস্থাতেই সার্জারি জরুরি। সাসপেক্ট অফ ম্যালিগন্যান্সি অথবা ম্যালিগন্যান্সি, দুই ক্ষেত্রেই ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন কতটা সার্জারি করবেন। থাইরয়েড গ্ল্যান্ড পুরো বাদ দেবেন না কি রাখবেন। সবগুলো গ্ল্যান্ড বাদ দেওয়ার প্রয়োজন আছে না নেই- সেটা বিবেচনা করে সার্জারি করা হয়। এর পর তা বায়োপসিতে পাঠানো হয়। তার থেকেই ধরা পড়বে থাইরয়েড ক্যানসারের অস্তিত্ব। এর পরের ধাপে দেখা হবে ক্যানসার শুধু গ্ল্যান্ডেই সীমাবদ্ধ, না কি তা ছড়িয়ে গিয়েছে। এই সব দেখে ক্যানসারে স্টেজ নির্ধারণ করা হয়। স্টেজ নির্ধারণ করে তার পর চিকিৎসা করা হয়।
• স্টেজ অনুযায়ী সার্জারি করেও সব সময় ক্যানসার কোষগুলো পুরোপুরি নষ্ট করা যায় না। এক্ষেত্রে ক্যানসার যাতে আর ছড়িয়ে না পড়ে তাই রয়ে যাওয়া কোষগুলিকে নিষ্ক্রিয় করতে প্রয়োজন রেডিও অ্যাকটিভ আয়োডিন থেরাপি। কতটা আয়োডিন থেরাপি দেওয়া হবে, তা নির্ভর করে ক্যানসার কতটা ছড়াচ্ছে তার উপর।
• সাধারণত এই চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে যান। তবে ক্যানসার যাতে ফিরে না আসে সেটা লক্ষ্য রাখতে ৬-১২ মাস অন্তর করাতে হবে থাইরোগ্লোবিউলিন ব্লাড টেস্ট।
• থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বাদ দেওয়ায় শরীরে পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বজায় রাখতে পরিপূরক হিসাবে বাইরে থেকে রোগীকে থাইরয়েড হরমোন ওষুধ দিতে হবে।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
বিডি প্রতিদিন/৩০ জুলাই ২০১৬/হিমেল-২৮
