২২ অক্টোবর, ২০২১ ২২:৫৮

শিশুদের ‘হাত ধোয়া’র অভ্যাসই গড়বে আগামীর সুস্থ প্রজন্ম

অনলাইন ডেস্ক

শিশুদের ‘হাত ধোয়া’র অভ্যাসই গড়বে আগামীর সুস্থ প্রজন্ম

প্রতীকী ছবি

কোভিড-১৯ মহামারির ধকল কাটিয়ে দীর্ঘ ১৮ মাস পর স্কুলে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। সংক্রমণ নিম্নগামী হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়ে গেছে এখনো। তাই শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার মতো কিছু অভ্যাস রপ্ত করার ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাত পরিষ্কার রাখলে শুধু যে করোনা থেকে রেহাই মিলবে তাই নয়- মুক্তি মিলবে ডায়রিয়া, আমাশয়, কৃমি এবং ভাইরাসবাহিত অন্যান্য রোগ থেকেও। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো সবার মাঝে অবহেলা রয়ে গেছে। হাত ধোয়া বিষয়ে সচেতনতার অভাবে সারাবিশ্বে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া, ইউনিসেফ জানিয়েছে- বিশ্বজুড়ে প্রতি দশজনের মধ্যে তিনজন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

সবার মাঝে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ও জীবাণুমুক্ত থাকার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রতিবছরের ১৫ অক্টোবর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’। চলতি বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারিত হয়েছিল ‘আমাদের আগামী আমাদের হাতেই- চল একসাথে সামনে এগিয়ে যাই’, অর্থাৎ ‘আওয়ার ফিউচার ইজ অ্যাট হ্যান্ড- লেট’স মুভ ফরোয়ার্ড টুগেদার’। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে সারাদেশে এবার ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস ২০২১’ গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়েছে।

বিশ্বে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া। ইউনিসেফ এর তথ্যমতে, বছরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৮ লাখ ৮ হাজার ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজারের বেশি ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মারা যাচ্ছে। তবে পারিবারিক সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ এবং নিউমোনিয়া সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।

ছোটবেলায় শিশুরা যা শেখে তার প্রভাব রয়ে যায় তাদের পরবর্তী জীবনে। শিশুদের মধ্যে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে বরাবরের মতো এবারও ‘হ-তে হাত ধোয়া’ বিষয়ক ক্যাম্পেইন এর আয়োজন করেছে জীবাণু থেকে সুরক্ষাকারী সাবানের ব্র্যান্ড ‘লাইফবয়’। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাককে সঙ্গে নিয়ে ব্র্যান্ডটির মাসব্যাপী এই হাত ধোয়া ক্যাম্পেইন এর লক্ষ্য সারাদেশের সাতশো স্কুলের সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থীকে হাত ধোয়ার গুরুত্ব ও সঠিক উপায় সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া।

শিশুরা যেভাবে ‘এ, বি, সি’ কিংবা ‘ক, খ, গ’ শেখে, সে ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লাইফবয় গত বছর থেকে ইংরেজি বর্ণমালা ‘এইচ’ নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মিশনে নেমেছে। ‘এইচ’ ফর ‘হ্যান্ডওয়াশিং’ ধারণাটি ছড়িয়ে দিতে ব্র্যান্ডটি কয়েক বছরব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। এই ক্যাম্পেইনের বার্তায় বলা হচ্ছে, ‘এইচ’ এর মাধ্যমে যেভাবে ‘হ্যাট’ বা বাংলায় ‘হ’ এর মাধ্যমে যেভাবে ‘হাতি’র পরিচয় পাওয়া যায় তেমনি ইংরেজিতে পরিচিতি হতে পারে ‘হ্যান্ডওয়াশিং’ ও বাংলায় ‘হাত ধোয়া’ শব্দগুলোর। 

আর তাই প্রাথমিক শিক্ষায় ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং এবং ‘হ-তে হাত ধোয়া’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে লাইফবয়। এতে বাচ্চারা ছোটবেলাতেই হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তাদের মধ্যে হাত ধোয়ার সহজাত অভ্যাস গড়ে উঠবে। প্রতিদিন কোন কোন কাজের পর তাদের হাত ধুতে হবে, তা শিখিয়ে দিলে একটি সুস্থ আগামী প্রজন্ম সহজেই গড়ে তোলা সম্ভব।  লাইফবয় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি শিশুকে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার পদ্ধতি শিখিয়েছে।

এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকেই লাইফবয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে ও অব্যাহত রেখেছে ব্র্যান্ডটির সামাজিক কার্যক্রম। গত বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে লাইফবয় সারাদেশের স্কুলে স্কুলে পৌঁছে গেছে এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করেছে। তাদের শিখিয়েছে হাত ধোয়ার সঠিকভাবে নিয়ম। এরপর মার্চে যৌথভাবে  ব্র্যাক ও ইউনিলিভার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে প্রচারণা চালিয়েছে।
 
এছাড়া সপ্তাহব্যাপী ক্যাম্পেইনে বিতরণ করেছে পাঁচ লাখ প্যাকেট লাইফবয় তরল সাবান। দেশের ৪৩টি জেলার ৮টি পৌরসভা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ ১২টি সিটি করপোরেশনে বসবাসরত দরিদ্র পরিবারের মধ্যে এসব প্যাকেট বিতরণ করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান- সেনা কল্যাণ সংস্থার (এসকেএস) তহবিলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য লাইফবয় তরল সাবান হস্তান্তর করে। ব্র্যান্ডটির অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে ছিল ৫০ হাজারের বেশি গণপরিবহন যাত্রী, পাবলিট টয়লেট ব্যবহারকারী ও গৃহহীনদের মাঝে লাইফবয়ের হাত ধোয়ার উপকরণ বিতরণ, ৬৪ জেলার ডিসি অফিসে হাত ধোয়ার তরল সাবান সরবরাহ করা ইত্যাদি।

অধিকন্তু লাইফবয় ও ডিজিটাল হেলথকেয়ার সলিউশানসের (ডিএইচ) সোশ্যাল বিজনেস ডিজিটাল হসপিটাল একত্রিত হয়ে সারাদেশে ১০ লাখ মিনিট ফ্রি ডিজিটাল ‘ডক্টর কন্সালটেশন’র উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং নানান ধরনের অসুস্থতা যেমন-ঠাণ্ডা ও জ্বর থেকে সবাইকে সুরক্ষিত রাখতে লাইফবয় গ্রাহকদের ভিডিও কল, চ্যাট এবং ফোন কলের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শের সুযোগ করে দিয়েছে।

শুধু তাই নয় সাইটসেভারস, গ্যাভি ও অক্সফামের মতো উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় লাইফবয়ের হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক ক্যাম্পেইনগুলো আফ্রিকার গ্রামাঞ্চল কিংবা শহর থেকে শুরু করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রায় ৪৫ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। লাইফবয় এতেই থেমে থাকেনি, ব্র্যান্ডটি ‘হেল্প এ চাইল্ড রিচ ফাইভ’ ক্যাম্পেইন নিয়ে নির্মাণ করেছে প্রামাণ্যচিত্রও। ২০১৯ সালে ‘কানস লায়নস’ এ যেটি তিনটি অ্যাওয়ার্ড জয় করে নেয়। এসব অর্জন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বজুড়ে লাইফবয়ের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা ও অবদানের স্বীকৃতি।

বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও লাইফবয় তার সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের  ‘লাইফবয়’ এর বিশেষ আয়োজন ছিল সিসেমি ওয়ার্কশপের সঙ্গে বিশ্বের ‘সর্ববৃহৎ ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ‘এর আয়োজন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ স্থান পাওয়ার লক্ষ্যে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ উপলক্ষে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম শুরু হওয়ার পূর্বে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “বর্ণমালা শিক্ষা হ-তে হাত ধোয়া অন্তর্ভুক্ত করার প্রত্যয় থেকে, এই বছর লাইফবয় উদ্যোগ নিয়েছে হাত ধোয়া নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্লাসরুমের গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করার। যেখানে অনেক মজার ও ইউনিক অ্যাক্টিভিটিজ থাকবে। বিশ্বব্যাপী সবাই শিখবে এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং। কারণ হাত ধোয়ার মতো ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে  ‘সুরক্ষিত হাতে, সুরক্ষিত দেশ’।” 

অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হাত ধোয়া বিষয়ে সচেতনতার অভাব বেশি দেখা যায়। তাই এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক হারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকেই সরকার হাত ধোয়ার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিল। দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সিটি করপোরেশন হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। হাত ধোয়ার গুরুত্ব বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোতেও নিয়মিত স্বাস্থ্য সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হয়েছে। তবে হাত ধোয়ার অভ্যাসে আমাদের স্থায়ী পরিবর্তন আনতে হলে এটি সামাজিক রীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ‘হাত ধোয়া’র এই আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের অংশগ্রহণই পারে আমাদের ‘হাত ধোয়া’র অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর