রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা বারবার বলছে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে ভেরিফেকশন করার পর। তারা কখনও বলেনি, রোহিঙ্গাদের নেবে না। আমরা বলেছি, তাদের নিয়ে যাও তবে ‘ইউ মাস্ট এনসিউর সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি’।
তারা অঙ্গীকার করেছে নিয়ে যাবে। কিন্তু এরপরও আজ প্রায় সাড়ে ৩ বছরে একটি রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। কারণ তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব। আমরা আশাবাদী রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নেবে।
রোববার বেলা ২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলামের দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কে আবদুল মোমেন এসব কথা বলেন।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে লেখা ‘শেষ সীমান্তের পর কোথায় যাবো আমরা’ এবং ‘রোহিঙ্গা : নিঃসঙ্গ নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠী’ শীর্ষক বইয়ের ওই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
একে আবদুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ সবদেশে গেছি। সবাই স্বীকার করেছে রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার। তাই সমস্যা নির্মূলও করবে তারা। সবাই বলেছে, স্থায়ী সমাধান হলো লোকগুলো ফিরিয়ে নেওয়া। সুতরাং সেইদিন থেকে এখনও আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ড্রাইভার সিটে আছে। আমেরিকা বলেন, ইউরোপ বলেন- সবাই একবাক্যে বলছে মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, দুনিয়ার কোথাও ১১ লাখ মানুষকে জায়গা দেওয়ার কোনো নজির নেই। সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাকের ১০ লাখ বাস্তুহারা মানুষ ইউরোপের ২৭টি দেশে জায়গা দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। আর এখানে ১১ লাখ মানুষকে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় দিয়েছেন। প্রথমদিকে বিদেশিরা কেউ সাহায্য করেনি। এখানকার লোকজন তাদের ঠাঁই দিয়েছেন, খাবার দিয়ে সাহায্য করেছেন। আমরা এটি নতুন আদর্শ সৃষ্টি করেছি। বাঙালিরা মানুষ, তারা মানুষকে মানবিকতার চোখে দেখে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে দেখেছি, তখন অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল আবার নিয়েও গেছে। ১৯৯২ সালে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা দেশে আসে। পরবর্তীতে আলোচনা মাধ্যমে তারা ২ লাখ ৩০ হাজারকে নিয়ে যায়। ইতিহাস আছে তারা নিয়ে গেছে, সেজন্য আমরা আশাবাদী বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকেও নিয়ে যাবে। কিন্তু কখন নিয়ে যাবে, তা বলা মুশকিল। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সব নিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশি দেশ আগেই জানিয়েছে তারা নিরপেক্ষ থাকবে। কৌশলগত কারণে প্রতিবেশী দেশ আমাদের পক্ষে থাকেনি। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আন্তর্জাতিক ফোরামেও নিয়ে গেছি। ১৩২টি দেশ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
আমাদের মূল উদ্দেশ্যে এই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। সুতরাং কে কোথায় ভোট দিল, সেটি অত বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। সম্প্রতি জাপানও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। জাপানে মিয়ানমারের অনেক শ্রমিক আছে। তারাও উদ্যোগ নিয়েছে, মিয়ানমারকে বোঝানোর। আমরা সবসময় আশাবাদী। সব সময় বিশ্বাস করি, আলোচনার মধ্যে সমাধান আসবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর