স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনীর মত একটি বাহিনী গঠনের প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সাথে এমন একটি বাহিনী পৃথিবীর সবদেশেই থাকে। এখন যেমন আমাদের র্যাব আছে। রক্ষীবাহিনীর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন এসেছে। তবে ক্ষমতা স্থায়ী করার জন্য রক্ষীবাহিনী করা হয়েছিল এটা সঠিক নয়।
আজ সোমবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর বেসামরিক প্রধান এবং রক্ষীবাহিনীর উপ-পরিচালক আনোয়ার উল আলমের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ গবেষণা ফাউন্ডেশন ও শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, টাঙ্গাইল যৌথভাবে এ স্মরণসভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন লেখক গবেষক ড. মাহবুব সাদিক, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ-৭১ এর মহাসচিব হারুন হাবিব, ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আহমেদ, বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম এবং টাঙ্গাইল জেলা সমিতির মহাসচিব মনছুরুল আলম হীরা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক সাকী আনোয়ার।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক রক্ষীবাহিনী গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, এখন ধর্মান্ধরা যা করছে, সেসময় কিছু কিছু বিভ্রান্ত বামপন্থী জঙ্গিবাদী কাজে লিপ্ত ছিল। তারা পাটের গুদাম পুড়িয়ে, রেললাইনে আগুন দিয়ে, মওলানা ভাসানী 'হক কথা' বের করে প্রথম সংখ্যাতেই ভারতের বিরুদ্ধে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার, মিথ্যাচার করতে থাকলেন। জাসদের 'গণকণ্ঠ' কত যে মিথ্যাচার করেছে তার শেষ নাই। এই প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষীবাহিনী করতে হয়েছিল।
স্মৃতিচারণ করে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, রক্ষীবাহিনীর নেত্বত্বে ছিলেন আনোয়ার উল আলম। তখন থেকেই তার সাথে আমার পরিচয়। যুদ্ধের সময় তার সাথে আমার দেখা হয়নি। আমাকে কাদের সিদ্দিকীর সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছিলো। আনোয়ার উল আলম বেসামরিক দিকে ছিলেন। আসলে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বেই ছিলেন।
ড. মাহবুব সাদিক বলেন, টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর প্রধান ছিলেন কাদের সিদ্দিকী। আর বেসামরিক প্রধান ছিলেন আনোয়ার উল আলম। তিনি সামরিক অংশটিকে অস্ত্র, গোলা বারুদ সরবরাহ করেছিলেন। এই কাজটি মোটেও সহজ কোন কাজ ছিল না। সামরিক ও বেসামরিক সমন্বয় না থাকলে মুক্তিযুদ্ধ সম্ভব হতো না।
অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, আনোয়ার উল আলম নিভৃতচারী ছিলেন, প্রচার বিমুখ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার যে অবদান তা এতটা প্রচারিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু রক্ষীবাহিনী গঠনের সময় তাকে ডেকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। রক্ষাবাহিনী নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এর অবসানে তিনি 'রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা' বইটি লিখে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী অবস্থা তুলে ধরে ম. হামিদ বলেন, যখন বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা খুনিদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করলো, তখন আনোয়ার উল আলম চেষ্টা করেছেন কিছু করা যায় কিনা। রক্ষীবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র ছিল পিলখানায়। কিন্তু সেগুলো ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। পরে অনেকের সাথে যোগাযোগ করেও কিছু করা সম্ভব হয়নি। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমরা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়েছি।
সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনোয়ার উল আলমের যে একনিষ্ঠ ভালোবাসা ছিল, তা তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন। অনেক সুবিধা অসুবিধায় তিনি বঙ্গবন্ধুর অনুগত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ