মানুষের নামের সঙ্গে তার চরিত্রের মিল থাকে না বললেই চলে। কিন্তু তা বলে কোনও বাড়িতে গিয়ে গৃহকর্তার খোঁজ নিতে গিয়ে যদি শোনেন, ‘রাষ্ট্রপতি তো একটু বাজারে গেলেন।’ কিংবা স্কুলে শিক্ষক ছাত্রের খোঁজ করতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজ আসেনি?’ তা হলে আপনার প্রতিক্রিয়া কী হবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, ভারতের রাজস্থানের রামনগর গ্রামে মানুষের এমন নামের জন্য বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই। কারণ এমন অদ্ভুত নাম রাখাই সেখানকার বাসিন্দাদের রীতি।
রাজস্থানের বুন্দির অন্তর্গত রামনগর গ্রামের অবস্থান জেলা সদর অফিস থেকে ১০ কিমি দূরে। জনসংখ্যা শ’পাঁচেকের মত হবে। এরা প্রায় সকলেই কাঞ্জার সম্প্রদায়ভুক্ত। একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই গ্রামের রীতি উচ্চ সরকারি পদ, অফিস, মোবাইল ব্র্যান্ড বা জনপ্রিয় পণ্যদ্রব্যের নামে ছেলেমেয়েদের নাম রাখা।
যার ফলে গ্রামের কারো নাম স্যামসাং, কারো সিম কার্ড, কেউ বা রাজ্যপাল, তো কেউ আবার হাই কোর্ট। গ্রামে এমন ভাইবোনও রয়েছে যেখানে ভাইয়ের নাম সিম কার্ড তো, বোনের নাম মিস কল।
গ্রামের এক নারী এক বার কোনও কার্যবশত ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরের কাছে গিয়েছিলেন। অফিসে কালেক্টরের প্রতাপ দেখে এতটাই মুগ্ধ হন তিনি যে, নাতির নাম রাখেন কালেক্টর। সেই কালেক্টরের বয়স এখন ৫০। তিনি কোনও দিন স্কুলের চৌকাঠও মাড়াননি।
গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে শিক্ষার হার অত্যন্ত নিম্নমানের। অনেকেই নানা অপরাধের সঙ্গেও যুক্ত। অপরাধপ্রবণতার কারণে এদের অনেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশি ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে নিজের বা আত্মীয়স্বজনের ছোট বাচ্চাকাচ্চাদের কারোর নাম রাখে আইজি, তো কারোর নাম এসপি।
তবে সমস্ত নামকরণই যে এমন তাৎপর্যহীন ছন্নছাড়া তা নয়। গ্রামে খোঁজে নিয়ে জানা গেছে স্বাধীনতার পরে-পরই এক দেশপ্রেমী গ্রামবাসী তাঁর ছেলের নাম রেখেছিলেন কংগ্রেস। এক বার এক দম্পতি পঙ্গু সন্তানের বাবা-মা হন। কিন্তু ছেলে একটু বড় হওয়ার পরেই দেখা যায়, সে অত্যন্ত বদমেজাজি। বাবা-মা ভেবেচিন্তে ছেলের নাম রাখেন হাইকোর্ট।
তবে বর্তমানে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র প্রতাপ ক্রমশ বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে রামনগরবাসীদের মধ্যেও। ইদানীং তাই অন্যান্য নামের তুলনায় স্যামসাং, জিওনি কিংবা নোকিয়া নামই বেশি জনপ্রিয় হয়েছে গ্রামে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ এপ্রিল, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-১৩