৯ আগস্ট, ২০১৯ ০৮:৩৯

টানা ৬০ বছর প্রতি সপ্তাহে রক্ত দিয়েছেন যে ব্যক্তি!

অনলাইন ডেস্ক

টানা ৬০ বছর প্রতি সপ্তাহে রক্ত দিয়েছেন যে ব্যক্তি!

একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতি চার মাস অন্তর অর্থাৎ ১২০ দিন পরপর রক্ত দিতে পারেন। কারণ প্রতি চার মাস পর মানবদেহে নতুন রক্ত তৈরি হয়।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা জেমস হ্যারিসন এই ক্ষেত্রে ইতিহাস গড়েছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে বিনামূল্যে রক্ত দিয়েছেন টানা ৬০ বছর! এভাবে রক্ত দিয়ে তিনি বাঁচিয়েছেন ২৪ লাখ অস্ট্রেলিয়ান শিশুর মহামূল্যবান জীবন। টানা ৬ দশক রক্ত দিয়ে অবশেষে ২০১৮ সালে রক্তদান থেকে অবসর নিয়েছেন এই মহামানব।

শুধু রক্ত দিয়ে এই বিপুলসংখ্যক শিশুর জীবন রক্ষা করার স্বীকৃতিস্বরূপ অস্ট্রেলিয়া সরকার জেমস হ্যারিসনকে দিয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘মেডাল অব দ্য অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া’।

এতসংখ্যক শিশুর জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে জেমস হ্যারিসনের রক্ত অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। জেমসের রক্তে অদ্ভুত ধরনের রোগপ্রতিরোধী অ্যান্টিবডি থাকায় সেটি দিয়ে অ্যান্টি ডি নামের জীবন রক্ষাকারী ইনজেকশন তৈরি করত অস্ট্রেলিয়ার ওষুধ প্রশাসন। গর্ভবতী মায়েদের শরীরে যদি রেসাস নেগেটিভ রক্ত (আরএইচ নেগেটিভ) থাকে এবং গর্ভে থাকার শিশুর শরীরে যদি রেসাস পজিটিভ রক্ত (আরএইচ পজিটিভ) থাকে, তাহলে ঐ সন্তানের মৃত্যুঝুঁকি বহু গুণ বেড়ে যায়।

মূলত মায়ের শরীরের রেসাস নেগেটিভ রক্ত (আরএইচ নেগেটিভ) থেকে এমন এক ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা কিনা শিশুর শরীরের রক্তের কোষকে ধ্বংস করতে থাকে। এর ফলে শিশুর মস্তিষ্ক দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে শিশুকে বাঁচানোর কাজ করে জেমসের রক্ত দিয়ে তৈরি করা অ্যান্টি ডি নামের ইনজেকশন।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে অন্যের দেওয়া রক্তে জীবন ফিরে পেয়েছিলেন জেমস। এরপর পূর্ণাঙ্গ বয়স হওয়ার পর থেকে নিয়মিত রক্ত দিতে শুরু করেন হ্যারি। কয়েক বছর পরই তার রক্তের এই মহামূল্যবান উপাদানটির বিষয়ে জানতে পারেন চিকিৎসকরা। এর পর থেকে সরাসরি কাউকে রক্ত দেওয়ার বদলে রক্ত দিতেন ওই বিশেষ ধরনের অ্যান্টি ডি ইনজেকশন তৈরির উদ্দেশ্যে, যাতে করে আরও অধিকসংখ্যক শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। আর এজন্য তিনি প্রতি সপ্তাহে রক্ত দিতেন।

চিকিৎসক ফলকেনমিরে বলেন জানিয়েছেন, জেমসের রক্ত অসাধারণ প্রকৃতির। গত বছর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াতে তৈরি হওয়া অ্যান্টি ডি ইনজেকশনের প্রতিটা ব্যাচই তৈরি হয়েছে জেমস হ্যারিসনের রক্ত থেকে। অস্ট্রেলিয়াতে প্রতি ১০০ জনের ১৭ জন নারীর ক্ষেত্রেই রেসাস নেগেটিভ রক্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টি ডি ইনজেকশনই একমাত্র ভরসা।

জেমসের শরীরে এই ধরনের রক্তের কারণ সম্পর্কে চিকিৎসকরাও কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তাদের ধারণা, ১৪ বছর বয়সে তিনি যখন রক্ত নিয়েছিলেন তখনই হয়তো তার রক্তের মধ্যে কোনও বিশেষ পরিবর্তনে তার রক্ত এমন হয়েছে। এমন মহামূল্যবান রক্তের অধিকারী হয়েও জেমস থেকেছেন নির্লোভ।

সূত্র: সিএনএন

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর