১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আশঙ্কা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সবসময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ শনিবার বিকেলে ইঞ্জিনীয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে ছয়দফা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
নেতা-কর্মীদর উদ্দেশ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আপনারা সব সময় সতর্ক থাকেন। আমরা সব সময় সতর্ক থাকলে ১৫ আগস্টের মত আর কোনো ঘটনা ঘটবে না। শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের মাধ্যমে অথবা বৈধভাবে ক্ষতাচ্যুত করার কোনো সুযোগ নেই। সূতরাং অবৈধভাবে বাংলাদেশের বিশাল একটা অংশ এটা(ক্ষতাচ্যুত) করার চেষ্টা লিপ্ত। আপনারা সতর্ক থাকলে এটা করতে পারবে না।
প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ বলেন, বাজেট সরকারের অর্থনৈতিক দর্শন। এটা কোনো গানিতিক হিসাব নিকাশ নয়। যারা আমাদের এ দর্শন বিশ্বাস করে না, তারা এটাকে সমর্থন করেন না। সমর্থন করবেনও না। এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তিনি সমালোচনকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের এ বাজেট পছন্দ না হলে বা পরিবর্তন-পরিবর্ধন চাইলে আপনাদের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করেন। সংসদে দেন।
কালোটাকা সাদা করণ প্রসঙ্গে আশরাফ বলেন, বাজেট দেওয়ার পর হৈ চৈ শুরু হয়েছে। যেন বাংলাদেশ গোল্লায় গেল। অথচ গত ৩০ বছরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল, তাতে দেশ গোল্লায় যায় নাই। কালোটাকা সাদা করেছে ৩৪ কোটি। এই পরিমাণ নগন্য। কিন্তু এবার এই সরকার ওই প্রবিশন বাতিল করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ। তিনি বলেন, অনেকে বিদেশী টাকায় এখানে(বাংলাদেশে) সংগঠন তৈরি করেন। তারা তাদের গান গান। আর বিদেশীদের অর্থে তাদেরই গাণ গাইবে এটাই স্বাভাবিক। এই তথাকথিত দেশপ্রেমিকরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তারা না জানে ইতিহাস, না জানে আইন, অর্থনীতি ও রাজনীতি।
স্বাধীনতার ঘোষক বলে অনেক দাবি করা হত, এখন এটা নাই উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, অনেকে স্বাধীনতা মামা, খালু, ভাই দাবি করতেন, এটা কমে গেছে। কারণ মানুষ যখন অন্ধকারে থাকে তখন তাদের সবকিছু বুঝানো সম্ভব। কিন্তু অবারিত আলো থাকলে সেটা সম্ভব নয়। তাই এই ঘোষক দাবিও কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, সত্য কোনোদনই অসত্যের কাছে পরাজিত হয় নাই। হয় না। আজকে আমরা বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত পথে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে কাজ করে যাচ্ছি। যদি একটি শক্তিশালি আধুনিক ও ভবিষ্যতমুখি রাষ্ট্রগঠন করতে পারি। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন হবে।
ছয়দফার স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেন, আমরা আমাদের জন্মের ইইতহাস ভুলে যাই। যে জাতি তার জন্মের ইতিহাস ভুলে যায় তারা জারজ সন্তানের উপাধি লাভ করে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ছয়দফা দেন আওয়ামী লীগও পুরোপুরি গ্রহণ করে নাই। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে আটভাগে বিভক্ত হল আওয়ামী লীগ। এমনকি আইয়ূব খানও গৃহযুদ্ধের ঘোষণা দিলেন। ছাত্রদের মাঝেও দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয়েছে। এমনকি আমাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগেও বিভিক্তি হয়েছে। তারপরও সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর ছয়দফা নিয়ে মানুষ বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে।
আশরাফ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা হঠাৎ করে আসে নাই। বাংলাদেশে, ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা এক না। ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা এসেছে, লণ্ডন ও দিল্লির গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে। আর আমাদের স্বাধীনতা এসেছে এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব –উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, স্বাস্থ্য সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজিত রায় নন্দি, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।