সরকারকে বিতর্কিত করতেই সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে। যারা নীতিমালা তৈরিতে ছিল তারা সরকারের বন্ধু নয়।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ বিকালে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত 'গণমাধ্যমের সামনে চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
সভায় বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, যারা এ নীতিমালা করেছে তারা আসলে সরকারের বন্ধু বা শুভাকাঙ্খি কিনা, সরকারকে এখনই তা দেখতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলছে। কিন্তু সম্প্রচার নীতিমালা গণমাধ্যমকে কঠোর জবাবদিহিতার মধ্যে এনেছে যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্সের সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, আমরা একটি নীতিমালা চেয়েছিলাম। এ চাওয়ার পেছনে কয়েকটি যুক্তিও ছিল। যেমন চাইলে যে কেউ যেনো টিভির লাইসেন্স না পায়। যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেনো যোগ্যতার ভিত্তিতেই লাইসেন্স পায়।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে নীতিমালা করা হযেছে এরকম নীতিমালা আমরা চাইনি। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য সহায়ক নীতিমালা দরকার।
শাইখ সিরাজ বলেন, এ নীতিমালায় আমাদের হাত পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিকদের চারটি বিষযে সুরক্ষার জন্য নীতিমালা চেযেছিলাম। সাংবাদিকতা পেশায় নতুনদের চাকরির নিরাপত্তা, টেলিভিশন চ্যানেগুলোর বেতন বৈষম্য দূর করা, বিনিয়োকারীদের নিরাপত্তা এবং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি সুরক্ষা চেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যমান নীতিমালায় তার উপস্থিতি নেই। তবে অনেকেই না বুঝে নীতিমালা নিয়ে সমালোচনা করছেন। এর ইতিবাচক দিকও আছে।
তিনি বলেন, একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, দেশে উজ্জল সাংবাদিকতা যেমন অগ্রসর হচ্ছে, তেমনি অপসাংবাদিকতাও কম নেই। এই অপসাংবাদিকতা দূর করতেই নীতিমালা প্রয়োজন।
বুলবুল বলেন, আমরা চেয়েছিলাম একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন। যে কমিশনের প্রধান হবেন গণমাধ্যমের কেউ। কোনোভাবেই সামরিক বাহিনীর বা আমলাদের কাউকে এই কমিশনে মেনে নেওয়া হবে না।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘ব্রডকাস্ট নীতিমালার একটি গেজেট আমরা হাতে পেয়েছি। এ নীতিমালা টেলিভিশনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর ধারাগুলো দেখে আমরা যে ধরনের মনোভাব পাই তা স্বাধীন গণমাধ্যমের পরিপন্থি।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে অনলাইন মিডিয়াকেও এখন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। অথচ এটি এখন একটি দ্রুত বিকাশমান মিডিয়া।
মাহফুজ আনাম বলেন, নীতিমালার ৫:১:৪ ধারায় বলা হয়েছে- রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন ধরনের সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না। আমাদের কথা হচ্ছে আমরা সেনাবাহিনী সম্পর্কিত তথ্যের স্পর্শকাতরতার বিষয়ে ভালোভাবেই অবগত। কিন্তু বেসামরিক এবং সরকারি তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার করা কেন যাবে না? কাজেই এ ধারায় প্রমাণ করে- এ নীতিমালা গণমাধ্যমের ওপর স্তক্ষেপ।
তিনি বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা সম্পাদকদের নিরস্ত্র করার অভিনব প্রয়াস। এ নীতিমালা হলে বাংলাদেশের শ্রোতা দর্শক দেশের টিভি-চ্যানেল বাদ দিয়ে অন্য দেশের মিডিয়ার ওপর ঝুঁকবে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমবিষয়ক কিছু নীতি ও আইন তৈরি এবং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনার জন্য এ সভা আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনায় উপস্থিত রয়েছেন শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রহমান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্সের সাধারণ সম্পাদক শাইখ সিরাজ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, শওকত মাহমুদ, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, মাছরাঙ্গা টিভির প্রধান সম্পাদক ফাহিম মুনায়েম প্রমুখ।
সভায় সভাপতিত্ব করছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।