বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে গতকাল মঙ্গলবার ডাকাতদলের আক্রমণের পর কয়েকজন এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়েছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রনি দেওয়ান (৩২)। নিজের প্রাইভেট কার নিয়ে মোটরসাইকেলে পালাতে থাকা ডাকাতদের ধাওয়া করেন তিনি ও তার দুই বন্ধু। ডাকাতরা তার গাড়িতে বোমা ছুড়ে মারলে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু তারপরও গাড়ি নিয়ে ডাকাতদের পেছনে ছুটতে থাকেন। একপর্যায়ে ডাকাতদের মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। মোটরসাইকেল উল্টে গেলে পড়ে যায় তিন ডাকাত। জনতার হাতে ধরা পড়ে তারা। ডাকাতদের ব্যাগে ছিল লুটের চার লাখ ২০ হাজার টাকা ও অস্ত্র। সেগুলো উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন রনি ও তার বন্ধুরা।
রনির সঙ্গে এই সাহসী অভিযানের সঙ্গী ছিলেন তার দুই বন্ধু নয়ন দেওয়ান (৩০) ও সোহেল মোল্লা (৩০)। আরও ছিলেন গাড়িচালক হাসান (২৭)।
রনি বলেন, ওরা আমার এলাকার লোকজনকে মেরে চলে যাবে, আর আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকব? জীবন বাজি রাখছি কি না জানি না। তবে ওদের ছাড়িনি। খুনি ধরতে পারছি, এইটাই শান্তি, টাকার লোভ আমাদের নাই।
রনিরা ছাড়াও ডাকাতদের প্রতিহত করার আরেক নায়ক ব্যাংকের সামনে অবস্থিত কাঠগড়া বাজার বায়তুল আমান জামে মসজিদের খাদেম তৈয়ব আলী (৪০)। ডাকাতির ঘটনা টের পেয়ে তৈয়ব মাইকে অনবরত ঘোষণা করেছেন, "ব্যাংকে ডাকাত পড়ছে। আপনারা বাইর হন...।" তার ঘোষণা শুনে প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ব্যাংকের ভবনের বাইরের সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। তবে ডাকাতদের গ্রেনেড, বোমা আর গুলির কাছে হার মানে সেই প্রতিরোধের চেষ্টা।
কাঠগড়ার পরিচিত দেওয়ান বাড়ির ইয়াকুব আলী দেওয়ানের ছেলে রনি দেওয়ান বলেন, দুপুরে খাওয়ার পর বাসার সামনে বসে ছিলাম। হঠাৎ মাইকের আওয়াজ শুনি, ‘ডাকাত ডাকাত’। দ্রুত আমার প্রাইভেট কারটি নিয়ে রাস্তায় বের হই। সঙ্গে নয়ন আর সোহেলও আসে। আমরা তিন রাস্তার মোড়ে উঠতেই লোকজন বলে, ‘ওই যে ডাকাত চলে যাচ্ছে।’ দেখি একটা লাল রঙের ডিসকভারি মোটরসাইকেল বিশ মাইলের দিকে যাচ্ছে। আমরা সেটিকে ধাওয়া করি। কিছুদূর যেতেই ওরা আমার গাড়িতে বোমা মারে।” তিনি বলেন, ‘বোমার আঘাতে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও থামিনি, চালক হাসানকে বলি, জোরে চালা। পেছন থেকে বাড়ি দে। ৫০০ মিটারের মতো যাওয়ার পর আমরা মোটরসাইকলটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই। তখন লোকজনকে নিয়ে ডাকাতদের একটাকে ধরে ফেলি। বাকি দুজন দৌড়ে গেলেও পরে ধরা পড়ে।’
রনির বন্ধু নয়ন ও সোহেল জানান, মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনের মধ্যে দুজনের পরনে ছির জিন্সের প্যান্ট, গায়ে ছিল শার্ট। একজনের পরনে ছিল পায়জামা-পাঞ্জাবি। সেই ছিল মোটরসাইকেলের চালক। ভারাসাম্য হারিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যাওয়ার পর ডাকাতদের কাঁধে থাকা দুটি ব্যাগও সেখানে পড়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে টাকা বের হয়ে আসে। তিনজন মিলে (রনি, নয়ন ও সোহেল) সেই টাকা গুনে পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে ছিল চার লাখ ২০ হাজার টাকা। ডাকাতদের একটি ব্যাগে তিনটি বোমাও ছিল বলে জানান রনিরা।
ঘটনার বর্ণনা দিলেন তৈয়ব আলী। তিনি বলেন, "টের পাইয়া আর দেরি করি নাই। মাইকে বলে দিছি। তবে আমার ভাইগোরে বাঁচাইতে পারলাম না। সবগুলা ডাকাতও ধরা পড়ল না। নিজের চেখে দেখলাম। ক্যামনে মারতাছে।" তৈয়ব আলী ও মসজিদের ইমাম মো. জহিরুল ইসলাম জানান, মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পর স্থানীয় ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী মনির প্রথমে ছুটে আসেন। সিঁড়ির কাছে ডাকাতরা গুলি করে, বোমা মেরে মনিরকে হত্যা করে। মসজিদ থেকে ঘোষণা আসার কারণে মসজিদ লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে ডাকাতরা।
বিডি-প্রতিদিন/ ২২ এপ্রিল, ২০১৫/ রশিদা