সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যেখানে স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। চারদিকে শুধু আহাজারি আর আহাজারি। মঙ্গলবার দুপুরে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালের এই করুন চিত্র বিরাজ করছে। জরুরী বিভাগ থেকে শুরু করে অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত কোথাও তিল ধারনের ঠাই নেই্। একজনের অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার আগেই আরেকজনকে নেওয়া হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে। আর প্রিয়জনকে ফিরে পেতে বাইরে কান্নার সাগরে ভাসছে স্বজনরা।
হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগের চেয়ে অপারেশন থিয়েটারের চিত্রই বেশি করুন। বোমার আঘাতে কারো পা উড়ে গেছে, কারো বুকে লেগেছে গুলি। ব্যথায় ছটফট করা মানুষকেগুলোকে বাঁচাতে প্রাণপনে চেষ্টা চালাচ্ছে চিকিৎসকরাও। একের পর এক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অপারেশন কক্ষে। সেখান থেকে বের করেই লাইফ সাপোর্ট দিয়ে কোনরকম বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। অপারেশন শেষে এ পর্যন্ত আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে গুরুতর আহত ১৬ জনকে। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কাজী সোহেল ইকবাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ছুরিকাঘাত, গুলি ও বোমার আঘাত পাওয়ায় প্রায় প্রতিটি রোগীরই তাৎক্ষনিক অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। এদের কারো পা ও হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। এসব রোগীর মধ্যে কয়েকজন আশংকাজনক বলেও জানান তিনি।
ডাকাতির ঘটনার সময় ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা উত্তোলন করছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী পারভেজ হোসেন। ডাকাতদের নির্মমতা দেখে হতবাক হয়ে যান তিনি। ভেতরে ঢুকে সবাইকে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে ডাকাতরা। কেউ বাধা দেওর সাহস পর্যন্ত পায়নি। এরপরও ডাকাতরা কয়েকটি বোমার বিস্ফোরন ঘটায়। বোমার আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাঠগড়া বাজারের কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী রফিক বলেন, দুপুরের খাবার শেষে দোকান খোলার জন্য বাসা থেকে বাজারে যাচ্ছিলাম। এমন সময় মাইকে ঘোষনা দেওয়া হয় ডাকাতির ঘটনা। সবাই যে যার মতো করে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এমন সময় ব্যাংকের সামনে ডাকাতরা গুলি ও বোমার বিস্ফোরন ঘটাতে থাকে। সাহস করে যে ব্যক্তিই এগিয়ে গেছে তার বুকেই গুলি চালিয়েছে ডাকাতরা। এক পর্যায়ে ডাকাতদের ছোড়া একটি গুলি আমার পায়ে লাগে। এরপর আর কিছুই বলতে পারি না।
উল্লেখ্য, গতকাল দুপুরে আশুলিয়ার কাঠগড়া শাখার বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতদের গুলি ও বোমায় নিহত হয়েছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, নিরাপত্তাকর্মী, গ্রাহক ও ডাকাতসহ মোট আটজন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২২ এপ্রিল, ২০১৫/ রোকেয়া।