আমদানি নিষদ্ধি ৭০টি বিলাসী মোটরসাইকেল আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। যার প্রতিটির খুচরা বাজার মূল্য গড়ে ৭ লাখ টাকা। দ্রুতগতির এই মোটরসাইকেল পুলিশ ছাড়া জনসাধারণের ব্যবহার নিষিদ্ধ। অত্যধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনের এ মোটরসাইকেল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হতে পারে, সে তথ্য রয়েছে শুল্ক গোয়েন্দাদের কাছে। সব মিলিয়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের এই মোটরসাইকেলগুলো মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, আমদানি নীতি লঙ্ঘন করে এই অবৈধ মোটরসাইকেল কমলাপুর আইসিডি কাস্টমস হাউসের মাধ্যমে এনেছে রাজধানীর মেসার্স বলাকা এন্টারপ্রাইজ। আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির মালিক রফিকুল ইসলাম তার ব্যবসায়িক ঠিকানা উল্লেখ করেছেন- ৩০২ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট সড়ক, সোনারগাঁও রোড। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটি এমন আরও ৭০টি মোটরসাইকেল আমদানি করে বাজারজাত করেছে। এক্ষেত্রেও একই ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি শুল্ক গোয়েন্দাদের।
এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমদানি নিষিদ্ধ ১৫৫ সিসির ওপরের ৭০টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা এসব মোটরসাইকেল বিভিন্ন অপরাধমূলক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হতে পারে, এমন তথ্যও আছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মোটরসাইকেল আমদানি যথেষ্ট সন্দেহজনক।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই বিলাসী মোটরসাইকেলের অবৈধ আমদানি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেননা, দেশের বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে এসব মোটরসাইকেল সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করে অবৈধ কর্মকাণ্ড করতে পারে। আর যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে দ্রুতগতিতে জায়গা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই মোটরসাইকেল খুবই উপযোগী। দেশে এই মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি আছে কেবল পুলিশের। ১৩১ শতাংশ শুল্ককর হারের এই মোটরসাইকেল দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার নিষিদ্ধ।
সূত্রমতে, আমদানি নীতি আদেশ ২০১২-২০১৫ অনুযায়ী ১৫৫ সিসির ঊর্ধ্বে মোটরসাইকেল আমদানি নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অধিক সিসির মোটরসাইকেলের আমদানিকারক মেসার্স বলাকা এন্টারপ্রাইজ। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কোনো প্রকার জনস্বার্থবিরোধী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহূত হতে পারে, এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দা পণ্য চালানটি আটক করেছে। এক্ষেত্রে সন্তোষজনক প্রমাণপত্র দেখাতে ও সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি।
পরে মোটরসাইকেলগুলোর সঠিক সিসি নির্ধারণের লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী- বুয়েটে পরীক্ষিত ৬টি মোটরসাইকেলের নমুনা সন্তোষজনক নয় দাবি করে শুল্ক গোয়েন্দা। সংস্থাটি এর কারণ হিসেবে বলেছে, ওই ৬টি নমুনা মোটরসাইকেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা গ্রহণ করা হয়নি। এরপর পুনরায় বুয়েট, বিআরটিএ এবং শুল্ক গোয়েন্দার উপস্থিতিতে আইসিডি ইয়ার্ডেই ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি নির্ধারণ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১৯ এপ্রিল পুনরায় পরীক্ষার দিন ধার্য করা হলেও আমদানিকারক রহস্যজনকভাবে ঘটনাস্থলে আসেননি। তবে বুয়েট ও শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/২২ এপ্রিল, ২০১৫/মাহবুব