পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও কুয়াকাটা মহাসড়কে শেখ কামাল ও শেখ জামাল সেতুর শুভ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে এ সড়কে চলাচলরত মানুষের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি দূর হলো। একইসঙ্গে পর্যটন স্পট কুয়াকাটা যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন থেকে সময় সাশ্রয় হবে দেড় ঘণ্টার বেশি। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দু'টি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনের খবরে শত শত মানুষ এদিন সকালেই সেতু দু'টিতে ভীড় জমায়। উদ্বোধনের পর সেতু দিয়ে শুরু হয় পর্যটকবাহী যানবাহন পারাপার। এক সাথে দু'টি সেতু উদ্বোধন হওয়ায় কলাপাড়া, মহিপুর, আলীপুর ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় এখন উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের দরবার হলে আয়োজিত এ ভিডিও কনফারেন্সে চীফ হুইপ আসম ফিরোজ, সংসদ সদস্য এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, সংসদ সদস্য আ.খ.ম. জাহাঙ্গীর হোসাইন, সংসদ সদস্য মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল হাওলাদার, কুয়াকাটা পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লাসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা এবং গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের তিনটি নদীর উপর শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সেতু নির্মান ছিল দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণাঞ্চল সফরকালে আন্ধারমানিক, সোনাতলা, শিববাড়িয়া নদীর উপর তিন সেতুর নির্মান কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়ার আন্ধার মানিক নদীর ওপর নির্মিত প্রি-ষ্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডারের ১৯টি স্প্যানের ওপর নির্মিত শেখ কামাল সেতুটি নির্মানে ব্যয় হয় ৬৫ কোটি ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৮৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ১০.২৫ মিটার। এছাড়া হাজীপুর সোনাতলা নদীর ওপর নির্মিত প্রি-ষ্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডারের ১০টি স্প্যানের ওপর নির্মিত শেখ জামাল সেতুটি নির্মানে ব্যয় হয় ৪৩.৪৩ কোটি টাকা। দৈর্ঘ্য ৪৮৩.৭১৫ মিটার ও প্রস্থ ১০.২৫ মিটার। সেতু দু'টিতে সোলার লাইট স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুরের শিববাড়ীয়া নদীর উপর শেখ রাসেল সেতুটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন।
শরিয়তপুর থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার পথে শেখ কামাল সেতুর উপর বসে কথা হয় প্রাভেটকার চালক মো. লিটনের সঙ্গে। এ সময় তিনি জানান, কলাপাড়া-কুয়াকাটা ২২ কিলোমিটার সড়কে ফেরী পারাপারের অহেতুক ঝামেলা পোহাতে হবে না। এখন তিনটি সেতু পার হয়ে কুয়াকাটা যাওয়া যাবে।
মৎস বন্দর মহিপুর ও আলীপুরের স্থানীয় ব্যবসায়িরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মৎস্য বন্দর আলীপুর ও মহিপুর। এখান থেকে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। বর্তমানে সেতু তিনটির দ্বার খুলে দেওয়ায় কম সময়ে মাছ সরবরাহ করা যাবে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, পর্যটন স্পট কুয়াকাটার সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এ সেতু দু'টি উদ্বোধনের কারণে ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেল হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এখন থেকে শুধু শীত মৌসুমে নয়, সারা বছরই কুয়াকাটায় পর্যটকের আগমন ঘটবে।
বিডি-প্রতিদিন/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ