গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে থাকলেও কোনদিন যুদ্ধ করেন নাই। কাজেই তার স্ত্রী খালেদা জিয়া শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটাক্ষ করবেই। আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার এবং মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আহমদের ভূমিকা কি ছিল তা কমিশন গঠন করে তদন্ত করে তাদের মরণোত্তর বিচার করার দাবি জানিয়েছেন।
জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব দাবি উত্থাপন করেন ২ মন্ত্রী। জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ''মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত সাক্ষী হিসেবে আমি আজকে বলতে বাধ্য হচ্ছি, ওনি শেলের রেঞ্জের বাইরে থাকতেন এবং যেখানে শেল পড়ত সেখানে থাকতেন না। যখন কালুরঘাটে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছিল। তখন বিএনপির এখনকার উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরীসহ ক্যাপ্টেন হারুন আহত হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেলে ওনি চলে গেলেন। আমরা চিন্তা করলাম কি ব্যাপার? মেজর জিয়া কোথায় গেল?''
পরবর্তীতে বদ্দারহাটে প্রচণ্ড যুদ্ধের মধ্যে যখন প্রায় পাকিস্তান সেনারা চলে এসেছে হঠাৎ আমি দেখলাম জিয়াউর রহমান নেই। আমি অপেক্ষা করলাম। এরপর জিজ্ঞাসা করলাম, ওনি কোথায় গেল? তারা বলল, ওনি ওইদিকে চলে গেছে। তখন আমি ভাবলাম, তাহলে তো আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। তখন দুই দিকে ফায়ারিং চলছে। মধ্যখানে রাস্তা। তখন সেই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে আসলাম। কাজেই জিয়াউর রহমান কোনদিনও যুদ্ধ করে নাই। কারণ হল সে যুদ্ধে ছিল কিন্তু যুদ্ধ করে নাই। কাজেই তার স্ত্রী খালেদা জিয়া শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটাক্ষ করবেই। কারণ ওনি তো মুক্তিযুদ্ধ দেখে নাই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক, মাহবুব আলম চাষীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করেছিল। তারা চেয়েছিল কনফেডারেশন গঠন করে পাকিস্তানকে ঠেকিয়ে রাখতে। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা কি ছিল তা কমিশন গঠন করে তা তদন্ত করে তাদের মরনোত্তর বিচার করা উচিত। জিয়াউর রহমান সেই সেক্টর কমান্ডার যিনি তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের চীফ অফ কমান্ড এমএজি ওসমানীর উপস্থিতিতে এক সভায় বলেছিলেন, আমরা রাজনৈতিক সরকারের অধীনে যুদ্ধ করব না। ওয়্যার কাউন্সিল গঠন করে যুদ্ধ করতে চাই। এমনকি মুক্তযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জিয়াউর রহমানকে দুইবার বরখাস্ত করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আ ক ম মোজাম্মেল হক আরও বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি দিয়েছিল। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের চাকরি দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজ ও আবদুল আলিমকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় কিছু কবর আছে। এই কবরগুলোর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের কবরও আছে। পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে কাজ করা জিয়াউর রহমানের কবরও আছে। এজন্য জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য এ অবাঞ্ছিত করবগুলো সরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধও করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। শুধু বিচার করলেই হবে না। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তাদের সন্তানরা যাতে নির্বাচন করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের সন্তানরা যাতে সরকারি চাকরি না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের সরকারি দায়িত্ব দেয়া যায় না। পাশাপাশি জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধীদের দল আখ্যায়িত করে তাদের নিষিদ্ধ করারও আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে জয়বাংলা শ্লোগানকে জাতীয় শ্লোগান উল্লেখ করে তিনি বলেন, জয়বাংলা শুধু আওয়ামী লীগের শ্লোগান নয়, এটা মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান, এ শ্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে।
আলোচনায় আরও অংশ নেন, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, মশিউর রহমান রাঙ্গা ও তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব