আগামী ২০১৮ সালের জুলাই মাসেই বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমান বন্দর থেকে আকাশে ডানা মেলবে বিমান। নির্মানাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দরের পূর্নাঙ্গ রূপ দিতে আরো ১৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ৪৩ কোটি টাকা বুঁঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসককে। নতুন করে অধিগ্রহণকৃত এই ভূমির উন্নয়ন ও মাটি ভরাট করতে ব্যয় হচ্ছে আরও ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগামী জুন মাসের মধ্যে নতুন করে অধিগ্রহণকৃত এই ভূমির উন্নয়ন কাজ শেষ হলে জুলাই মাসেই আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহবান করা হবে। এরপরই পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে বাগেরহাটের ফয়লায় বহুকাঙ্ক্ষিত পূর্নাঙ্গ খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মান কাজ।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লায় খুলনা-মংলা মহাসড়কের পাশে ২৫৬ হেক্টর জমির উপর পূর্নাঙ্গ খানজাহান আলী বিমান বন্দরের নির্মান প্রকল্পটি গত বছরের ৫ মে একনেকের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়র এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে ৪৯০ কোটি টাকা ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তহবিল থেকে ব্যয় হবে বাকি ৫৪ কোটি টাকা। আগামী তিন বছরের বছরের মধ্যে এই বিমান বন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। বাগেরহাট শহর, মংলা বন্দর ও বিভাগীয় শহর খুলনার সাথে ২৫ মিনিটের সমদূরত্বে নির্মিত হচ্ছে এই বিমান বন্দরটি। বিমান বন্দরটির নির্মান কাজ শেষ হলে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম, হযরত খানজাহান আলীর মাজার ও ওয়ার্ল্ড হ্যরিটেজ ষাটগুম্বজ মসজিদের পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ, দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা, ইপিজেড, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, চিংড়ি শিল্প ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। একইসঙ্গে নির্মানাধীন পদ্মা সেতু ও নতুন বিমান বন্দরের কারণে দক্ষিণাঞ্চল পরিণত হবে অন্যতম অর্থনৈতিক জোনে। পরিকল্পপনা মন্ত্রনালয় ও বেবিচক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নব্বই দশকে বিএনপি সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমানের একক প্রচেষ্টায় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লায় মংলা-মাওয়া-ঢাকা মহাসড়কের পাশে হযরত খানজাহান আলীর (র:) নামে বিমান বন্দর নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রথমে অধিগ্রহণ করা হয় ৯৪ একর জমি। অধিগ্রহণকৃত ওই জমি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্থান্তরের পর ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমান বন্দরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৯৭ সালে শুরু হয় বিমান বন্দরের মাটি ভরাটের কাজ। প্রায় ২৪ কোটি টাকায় আংশিক মাটি ভরাট করা ছাড়া তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মানে আর কিছুই তখন করা হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে আবার শুরু হয় মাটি ভরাটের কাজ। এক পর্যায়ে অর্থ বরাদ্দের অভাবে কয়েক মাসের মধ্যে তাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর খানজাহান আলী বিমান বন্দর প্রকল্পের আর কোন কাজ হয়নি। এ অবস্থার বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দেয়। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে কুয়েট বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বিমান বন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দ্রুত এই বিমান বন্দর নির্মানে প্রথম ধাপে ছোট বিমান ওঠানামার জন্য ২৫০ কোটি টাকা ও দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। কুয়েট বিশেষজ্ঞদের এ দুটি প্রস্তাবনার বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করে। পরে প্রস্তাবনা দু'টি একিভূত করে পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দর নির্মান প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়।
বর্তমানে এই বিমান বন্দর প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিমান ও সিএ উইং) আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত বছরের ৫ মে একনেক সভায় পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দর রূপে ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাগেরহাট খানজাহান বিমান বন্দর প্রকল্পটি পাশ হয়। এই টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে ৮০ ভাগ ও বেবিচক তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে ২০ ভাগ। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে এই বিমান বন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আরও ১৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এই জমি অধিগ্রহণের জন্য বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছে ৪৩ কোটি টাকা বুঁঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে অধিগ্রহণকৃত এই ভূমির উন্নয়ন ও মাটি ভরাট করতে ব্যয় হচ্ছে আরো ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
বিডি-প্রতিদিন/২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ