জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীরা দেশে আরও হামলার পরিকল্পনা করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কয়েকটি শ্রেণি-পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, নানা ধরনের পরিকল্পনা আছে। আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আরও সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
গণভবন থেকে বুধবার কয়েকটি জেলার সরকারি প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, ''সবাইকে আরও সচেতন থাকতে হবে। কারণ এটাও মনে রাখতে হবে যে, এটা আর এখানেই থামবে না।'' তিনি এসব হামলায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জোটের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনার কথাও জানান।
জঙ্গিবাদ রুখতে দেশবাসীকে সদা সজাগ-সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এরা (সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত) ইসলামের কথা বলে মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করে ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করছে। এটা সহ্য করা হবে না। প্রত্যেক এলাকায় জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি, কোর কমিটি গঠন করে আড়ালে-আবডালে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গি, নিখোঁজ ব্যক্তি এবং গোপন তৎপরতাকে খুঁজে বের করতে হবে। সবাইকে একজোট হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বুধবার দুপুরে গণভবনে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মাটিতে জঙ্গি সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের স্থান হতে দেবে না।
গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনা দেশের জন্য লজ্জাজনক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক সবাইকে জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জঙ্গি হামলা করে বাঙালি জাতিকে বিশ্বের সামনে হেয় করছে, ইসলামকে হেয় করছে। পবিত্র ধর্ম ইসলামকে হেয় করবে তা বরদাশত করবো না।
তিনি বলেন, নিরীহ মানুষ হত্যা করা মহাপাপ। যারা এটা করছে জনগণের ঘৃণা ছাড়া আর কিছু পাবে না।
অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামলায় জড়িতরা নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজের ছাত্র। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের কোনো চাহিদা অপূরণীয় নেই। তারপরও কেন জঘন্য পথে পা বাড়াল? নিজের সন্তানের প্রতি বাবা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ''আজ যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সারা বিশ্বে উজ্জ্বল, যখন আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, সেই সময় এ ঘটনা ঘটিয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা, উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা, দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মানুষের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।''
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ''সবার শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমি মনে করি আমাদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসনে যারা কর্মরত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (যেমন: পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার-ভিডিপি), জনপ্রতিনিধি (ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, মহানগর, জেলা এবং সংসদ সদস্যরা), সমাজসেবক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।''
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী প্রকৃত অর্থে ইসলাম ধর্মেরই ক্ষতিসাধন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করে এই পবিত্র ইসলাম ধর্মকেই আজকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। আমাদের এই পবিত্র ধর্মকে কেউ হেয় করবে, এটা আমরা বরদাশত করব না।
প্রধানমন্ত্রী পিতা-মাতা, অভিভাবকদের নিজের সন্তানদের প্রতি যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জঙ্গিবাদ দমনে সবার সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
ঈদের জামাতে হিন্দু ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তাপ্রহরা দেওয়ার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে এটাকেই সব ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ এবং এই দেশ সাংবিধানিকভাবেই সব ধর্মাবলম্বীর আবাসস্থল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও সবাইকে সতর্ক করে দেন।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ