সুন্দরবনের মুর্তিমান আতংক বনদস্যু মজনু ও ইলিয়াছ বাহিনীর প্রধানসহ ১১ বনদস্যু আত্মসমর্পন করছে। আজ শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাটের মংলায় বিএফডিসি (ফুয়েল) জেটিতে আনুষ্ঠানিক আত্মসর্মপন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। দুই ডাকাত বাহিনী ২৫টি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২০০ রাউন্ড গোলাবারুদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করবে। শুক্রবার সকালে মংলায় বৃষ্টি হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে প্রথমে গোপালগঞ্জ পৌঁছান। সেখান থেকে সড়ক পথে তিনি মংলায় আসছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৩১ মে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যুদল মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টারসহ ১০ সদস্য বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে।
দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহবানের ধারবাহিকতায় এসব বনদস্যু আত্মসমর্পন করেছে বলে আইনশৃংখলা বহিনী দাবি করেছে।
জানা যায়, গত বুধবার আত্মসমর্পণের সুযোগ নিতে মজনু ও ইলিয়াছ বাহিনীর প্রধানসহ প্রথম অবস্থায় ৭ বনদস্যু পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা মুন্সিগঞ্জ এলাকায় এসে তাদের ব্যবহৃত দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরে তাদের মাধ্যমে সুন্দরবনে অবস্থানরত বাহিনীর অন্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হলে আরও ৪ সদস্য আত্মসমর্পন করতে রাজি হয়। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মংলায় ওই দিনের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ (খুলনা ও সাতক্ষীরা) ও বঙ্গোপসাগরে ত্রাস সৃষ্টিকারী বনদস্যু মজনু ও ইলিয়াছ বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্নভাবে আত্মসমর্পণের সুযোগ খুঁজছে, এমন খবরের ভিত্তিতে র্যাবের গোয়েন্দা দল তৎপরতা শুরু করে। এক পর্যায়ে মজনু ও ইলিয়াছ বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে র্যাবের কাছে নিশ্চয়তা চায়। এরই ধারাবাহিকতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র-গোলাবারুদ তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে মজনু ও ইলিয়াছ বাহিনীর প্রধানসহ ১১ বনদস্যু।
সুন্দরবনে বনদস্যুদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন এমন একাধিক সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনে এখনো ৬টি বাহিনী দস্যুবৃত্তিতে সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে ভয়ংকর দস্যু সাগর বাহিনীর সাথে র্যাবের যোগাযোগ হয়েছে। তারাও আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে রাজি হয়েছে। অপর রাজু বাহিনীর প্রধান রাজু বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে সে সুন্দরবনে তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ন্ত্রন করছে বলে জানা গেছে। র্যাবের একটি সূত্র জানায়, বনদস্যুদের ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর প্রতিটির মূল্য গড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। বাইরে থেকে গডফাদাররা এই অস্ত্র তাদেরকে ভাড়া দেয়। বনদস্যুরা জেলে-বনজীবিদের জিম্মি করে লাভবান হলে এই অস্ত্র ও অর্থ ফেরৎ দেওয়া হয়। অপারেশনের সময় ছাড়া অস্ত্রগুলো বনদস্যুরা বনের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে লুকিয়ে রাখে।
র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফরিদুল আলম জানান, আত্মসমর্পন করা মজনু ও ইলিয়াছ বাহিনীর মোট ২৬ জন সদস্যের মধ্যে বাহিনী প্রধানসহ আজ শুক্রবার ১১ জন আত্মসমর্পন করবে। বাকি সদস্যদের আত্মসমর্পনের আহবান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৩১ মে আত্মসমর্পন করা মাস্টার বাহিনীর প্রধানসহ ১০ বনদস্যু এখন কারাগারে রয়েছেন। র্যাব-৮ এর ডিএডি মো. হাবিব বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে মংলা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। তাদেরকে আর্থিক সহায়তা, জমি প্রদান ও দোকান করে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ