গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক এলাকার ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় আজ শনিবার সকালে বয়লার বিস্ফোরণে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনের তীব্রতায় চারতলা ভবনের পুরোটাই ধ্বসে পড়ে। মূর্হুতের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা কারখানা ছাপিয়ে আশপাশের বাসাবাড়ি, গোডাউন ও কারখানায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এতে অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক শ্রমিক ও পথচারি আহত হয়েছে। আহতদের টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে টঙ্গী, জয়দেবপুর, ঢাকার কুর্মিটোলা ও আশুলিয়া ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়েও সকাল ১১টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ডিডি বদিউজ্জামানের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে শোকের মাতম শুরু হয় স্বজনদের মাঝে।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীরা জানায়, আজ সকাল পৌণে ৬টার দিকে কারখানার নিচতলায় মূলফটকের পাশে স্থাপিত বয়লার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা কারখানায় রক্ষিত ট্যাবলেটের স্ট্রিপ্ট, পটেটো চিপস ও বিস্কুটের ফয়েলপ্যাক তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল ও কেমিক্যালের ড্রামে ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের আগমূর্হুতে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক ওই কারখানায় রাতভর কাজ করছিলেন। হঠাৎ আগুন লাগার খবর শুনতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন এবং দিগদ্বিদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন। আটকে পড়া শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে বের হতে গেলে আগুনে পুড়ে কারখানার শিফট ইনচার্জ সুভাষ চন্দ্র দাস, ইদ্রিস আলী, আল মামুন, নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল হান্নান, শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, রফিকুল ইসলাম, দুইজন অজ্ঞাত পথচারি ও মহিলাসহ অন্তত ২২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছে শতাধিক শ্রমিক।
এছাড়া আসিফ, রোকন, দিলিপ চন্দ্র রায়, ফেরদৌস আলম, আবু সাঈদ, আকবর আলী, শহিদুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, লিটন, মাহবুব, কামরুল ইসলাম, জাকির হোসেন, মিজানুর রহমার, নিজামউদ্দিন, শহিদুল, শাহআলমসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। এদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় প্রায় ৩০জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ পারভেজ হোসেন বলেন, 'ওই কারখানার বিস্ফোরিত বয়লারের টুকরার আঘাতে ও আগুনে দগ্ধ হয়ে ১৩ জনের লাশের নাম ঠিকানা হাসপাতালে নথিভূক্ত হয়েছে। তাছাড়া আহত ব্যক্তিরদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৩০জনকে ঢামেকে পাঠানো হয়েছে আর ৭জন রোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে'।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক আনিস মাহমুদ বলেন, 'ব্রয়লার বিস্ফোরণে কারখানায় এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে। বয়লারটি কারখানার মূলফটকে থাকায় বিস্ফোরণে দেয়াল ধ্বসে পড়ায় এবং কালো ধোয়ার কুণ্ডলীর কারণে শ্রমিকরা বের হতে পারেনি। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আমরা ১৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। এছাড়াও বেশ কয়েকজন দেয়ালচাপা পড়ে আছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের ২৫টি ইউনিট কাজ করছে'।
গাজীপুর সিটি মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন,'খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও এলাকাবাসী ঘটনা স্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। ঈদের আগ মুহূর্তে এমন ঘটনা খুবুই বেদনা দায়ক। গাজীপুরে এটায় সবচেয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা '।
বিডি প্রতিদিন/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/হিমেল-১০/তাফসীর