ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তায়নের পূর্বে আইনের কতিপয় বিষয় সংশোধনের জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটে সম্পূর্ণ না হলেও কিছুটা এসবের প্রতিফলন আমরা লক্ষ্য করেছি। বাজেটে কতিপয় পণ্যের ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক অব্যাহত রাখা হয়েছে-যা দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেবে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে টার্নওভার ট্যাক্স ৩% অপরিবর্তিত রেখে টার্নওভার করের সীমা পাঁচ কোটি টাকা হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর এফবিসিসিআই’র তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং তদারকির মান নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে।
এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো ব্যক্তির অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বার্ষিক টার্নওভার সীমা ৩৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বর্তমানে যা ৩০ লাখ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। ক্ষুদ্র, গ্রামীণ উদ্যোগ, কুটির শিল্প ইত্যাদি প্রান্তিক খাতের বিকাশে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা দোকানদারদের হিসাব সংরক্ষণের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে অব্যাহতি এ সীমা ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করার জন্য পুনরায় প্রস্তাব করে এফবিসিসিআই।
প্রস্তাবিত বাজেটে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রভৃতি খাতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে মহিউদ্দিন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় সুবিধাভোগীদের সংখ্যা এবং মাসিক ভাতার হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেইসাথে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বছরে দুটি উৎসব ভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে তা নিঃসন্দেহে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়া গতিশীল করবে। তবে এসব অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি সরকারকে আহ্বান জানায়। চলতি অর্থ বছরের মত আগামী বাজেটেও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দের জন্য এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, নতুন বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫%। চলতি অর্থ বছরের বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যবস্থা থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা (ব্যাংক ব্যবস্থা ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা) নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভলশীলতা উৎপাদনশীল খাততে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।