না ফেরার দেশে চলে গেলেন (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন আনিসুল হক। তার উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠান দুটি জনপ্রিয়তা পায়। এরপর তৈরি পোশাক ব্যবসায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে ঢাকার অবস্থা পাল্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু সে দায়িত্ব শেষ করে যেতে পারলেন না তিনি।
একটি নিরাপদ, আধুনিক ও নারীবান্ধব মহানগরী গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৫ সালের ৬ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেন আনিসুল হক। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন আনিসুল হক। সিটি মেয়রের দায়িত্ব নিয়েই রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেন তিনি। রাজধানীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নগরবাসীর হৃদয়ে ঠাঁই নিয়েছিলেন তিনি। মেয়র হিসেবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তার মোড় থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণ, গাবতলীতে ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে রাস্তা সংস্কার, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কূটনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গুলশান-বারিধারার নিরাপত্তা জোরদার, গুলশান-বনানী এলাকা থেকে পুরনো বাস সরিয়ে ‘ঢাকা চাকা’ নামের নতুন এসি বাস সার্ভিস চালু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, ‘সবুজ ঢাকা’ নামের বিশেষ সবুজায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে নাগরিক মহলে বিশেষ প্রশংসিত হন তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সমস্যায় দিনে-রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েও নগরবাসীর আস্থাভাজন হয়েছিলেন তিনি।
গত মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজধানী নিয়ে তার স্বপ্নের কথা শুনিয়েছিলেন আনিসুল হক। বলেছিলেন, ঢাকাকে বিশ্বমানের রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যা দেখতে আসবে বিশ্বের মানুষ। নগর পরিবহনেও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। নাতির জন্ম উপলক্ষে ২৯ জুলাই সপরিবারে লন্ডনে যান আনিসুল হক ও তার স্ত্রী রুবানা হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মস্তিষ্কের রক্তনালিতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। আগস্টের মাঝামাঝিতে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তির পর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল তাকে। অবস্থার উন্নতি ঘটার পর ৩১ অক্টোবর তাকে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশনে স্থানান্তর করা হয়েছিল। তার এক মাসের মধ্যে গত মঙ্গলবার আবার আইসিইউতে নেওয়া হয় আনিসুল হককে। শিল্প-বাণিজ্যের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি, ব্যবসায়ী ও একসময়কার টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আনিসুল হক ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫২ সালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার শৈশবের একটি বড় সময় কাটে ফেনীর সোনাগাজীর নানার বাড়িতে। আনিসুল হক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের বড় ভাই।
বিডি প্রতিদিন/০১ ডিসেম্বর ২০১৭/এনায়েত করিম