বিরোধী দলের নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তারপরও উনি যে চেষ্টা করছেন এটা যদি জনগণ জানতে পারে তাহলে তারা শান্তি পায়। আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা অনেক কম। কিন্তু আমরা কি সেটা পূরণ করতে পারছি? চালের দাম বেশি। এর সঙ্গে মাছ, মাংসের দাম অনেক বেশি। এখন মানুষ ভাতের সঙ্গে আলু ভর্তা খেতে পারে। কিন্তু ভর্তা দিয়ে কতদিন খাবে।
দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে রওশন এরশাদ এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, অংক কষে কষে আমরা অনেক কিছু দেখাতে পারি। কিন্ত জনগণ দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে চায়। ব্যাংকিং খাতগুলোর কি অবস্থা তা সবাই জানেন। অর্থনীতির খাতে ধস নেমেছে। শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। অর্থমন্ত্রীর মতো এরকম যোগ্য মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ব্যাংকে এত বড় ধরনের ধস নামলো কেন? শিক্ষা খাত ও শেয়ার বাজার দেশের জনগণের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গুরুত্ব সহকারে এ বিষয়গুলোর সমাধান করার আহবান জানান বিরোধী দলীয় নেতা।
তিনি বলেন, শিক্ষা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেখানে দেখেন কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে অনেক কম অনুদান দেয়া হয়। এতে উদাসীন থাকলে শিক্ষার উন্নয়ন হবে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস লেগেই আছে। সৌদি আরব থেকেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থা দেশে বারবার কেন হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন করে শিক্ষা খাতে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কি হবে? এটা বন্ধ হবে কবে? সরকার কেন এটা বন্ধ করতে পারছে না? এখানে শিক্ষা মন্ত্রীকে যদি এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় উনি কি জবাব দেবে? সরকার যদি এক্ষেত্রে না পারে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিয়ে চেষ্টা করতে পারে। তারা কি এটা পারবে না? সাধারণ লোক তো প্রশ্নপত্র ফাঁস করে না। যারা প্রশ্নপত্র তৈরি করে তারা এটা ফাঁস করছে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ শান্তি চায়। শান্তিতে থাকতে চায়। আমাদের সেই শান্তি দিতে হবে। এটা করতে হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এটা করতে হবে। জনগণের কাজ নেই বলে দেশে মাদকের বিস্তার লাভ করছে বেশি। এতে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে এটা একটি বড় ধরনের দুর্যোগ বলে মনে করি। দেশের সমস্যাগুলে যদি চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা যায় তাহলে আমরা এখনই উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবো।
এসময় রওশন এরশাদ বলেন, দেশে কিছু কিছু বিষযে সমস্যা আছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক স্নেহশীল নারী। মায়ের দরদ দিয়ে সবকিছু সমাধানের চেষ্টা করেন। সে কারনে আমি কিছু কথা বলি।
রওশন এরশাদ পদ্মাসেতুকে সরকারের উন্নয়নের মাইলফলক উল্লেখ করে বলেন, পদ্মা সেতু অবশ্য আমাদের অবকাঠামোগত বড় মাইলফলক। এটার কাজ শুরু হয়েছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এখন এর বরাদ্দ হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এত টাকা বরাদ্দ কেন? কিছুদিন পর পর যদি বরাদ্দ বাড়ানো হয় তাহলে কি করে হবে?
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, টকশোতে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু তারা জানেন না যে আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অনুসরন করছি। তাদের পার্লামেন্ট সিস্টেমে সরকারকে সহযোগিতা করে বিরোধী দল। কিন্তু তারা এটা না বুঝে বিরোধী দলের সমালোচনা করছে।
তিনি আরও বলেন, এই সংসদ প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। সবার মনে আছে কি অবস্থায় কোন সময় আমরা নির্বাচন করেছি। জাতীয় সংকট উত্তরনের জন্য আমাদের দলই তখন এগিয়ে এসেছিলো দেশ ও দেশের জনগণকে সাহায্য সহযোগিতা করতে। অতীতে যেসব সংসদ শেষ হয়েছে কোনবার কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি। এবার শান্তিপূর্ণভাবে সংসদ শেষ হচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/ ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান