জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন অংশের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির সাথে গভীর আঁতাতের অভিযোগ তুলে ১১ জানুয়ারি দলের কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। সভাপতির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, আমরাই মূল জিএসডি। আর জেএসডির একাংশ আজ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-চেতনা, দলের অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি এবং তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি ( নতুন শক্তি) গড়ে তোলার অঙ্গীকার ভুলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী দল ও গোষ্ঠীর সাথে হাত মিলিয়েছে। দলের ভিতরে গণতন্ত্র চর্চা বাদ দিয়ে ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও গঠনতন্ত্র বিহীনভাবে কাউন্সিল করে ব্যক্তির ইচ্ছামত নেতৃত্ব নির্ধারণ করার দিকে এগুচ্ছে। যা দলের নেতাকর্মীরা মেনে নেয়নি। তাই, তাদের প্রেরণাতেই আমরা আগামী ১১ জানুয়ারি জাতীয় কনভেনশন করার ঘোষণা দিচ্ছি।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেরনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল করিম ফারুক। উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি এম এ গোফরানসহ দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে জিয়া খোন্দকার, মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল খালেক, দেলওয়ার হোসেন প্রমুখ।
দলের এই ভাঙনের জন্য কে দায়ী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মালেক রতন বলেন, এই অবস্থার জন্য দলের নেতৃত্বের একাংশ দায়ী। আমি যেহেতু দলের সাধারণ সম্পাদক, একটা দলের নেতৃত্বে আরেকটা অংশ থাকে। সেটা কে তা আপনারাই বুঝতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সাথে ঐক্য প্রসঙ্গে আবদুল মালেক রতন বলেন, নির্বাচনের আগে প্রথমে একে নির্বাচনী ঐক্য বা সমঝোতা বলা হলেও নির্বাচনের পর একে আরো ঘনিষ্ট থেকে ঘনিষ্টতর করা হচ্ছে। আঙ্গুল কেটে রক্ত শপথ করা হচ্ছে। তারা দলের ভিত গণতন্ত্র বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত,পরিবারতন্ত্র ও কোটাতন্ত্রে দিকে ঝুঁকে পড়েছে। গঠনতন্ত্র বিহীনভাবে কাউন্সিল করে ব্যক্তির ইচ্ছামত নেতৃত্ব নির্বাচন উপজেলা, জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় কমিটির করার দিকে এগুচ্ছে। ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে দলের অবৈধ কাউন্সিল আয়োজনের উদ্যোগ সংখ্যাগরিষ্ট নেতা-কর্মী মেনে নেয়নি। তিনি বর্তমান সরকার ও সরকার বিরোধী রাজনীতির স্বরূপ উম্মোচন করে আরো বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও সে ভিত্তিক রাজনীতি ও রাষ্ট্র প্রশাসন গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অপরদিকে বিএনপিসহ বিরোধী জোট সব ভুলে শুধু মুখে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলছে। এতে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন যেমন তারা জোরদার করতে পারছে না তেমনি জনদুর্ভোগ লাঘবেও তাদের ভূমিকা জাতির কাছে দৃশ্যমান হচ্ছে না। আর এ ধরণের পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থ, স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের ওপর নানা দিক থেকে আঘাত আসলেও প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে উঠছে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলসমূহকে গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালনার উপরই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও সুষ্ঠু রাজনীতির বিকাশ নির্ভর করে। এজন্যই অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ কাউন্সিল বর্জন করে ১১ জানুয়ারি কনভেনশনের মাধ্যমে দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এ কনভেনশনে দলের ঘোষণাপত্র গঠনতন্ত্র, নিয়ম নীতি চূড়ান্ত করে গণতান্ত্রিকভাবে দলের একটি কাউন্সিল করা হবে। এর মধ্য দিয়ে জেএসডি’র দশ দফা, সিরাজুল আলম খানের ১৪ দফাসহ অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক কর্মসূচি নেয়ার পথ প্রশস্ত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আপনারা জানেন যে জেএসডি সকল অন্যায় অবিচার ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ এবং ক্রিয়াকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী দল হিসেবে পরিচিত। এই পরিচয় অর্জন করতে গিয়ে কর্নেল তাহের ফাঁসির মঞ্চে ঝুঁলেছেন এবং সিদ্দিক মাস্টার, অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেনসহ প্রায় ২৪ হাজার নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। অথচ জেএসডি নেতৃত্বের একাংশ আজ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ চেতনা দলের অংশীদারিত্বের গঠনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি এবং রাজনীতিতে আপদ-বিপদ হিসেবে পরিচিত শক্তির বিরুদ্ধে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার অঙ্গীকারকে ভুলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী দল ও গোষ্ঠীর সাথে আঁতাত করেছে। দলের ভিতরে গণতন্ত্র চর্চা বাদ দিয়ে ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও গঠনতন্ত্র বিহীনভাবে কাউন্সিল করে ব্যক্তির ইচ্ছামত নেতৃত্ব নির্ধারণ করার দিকে আগাচ্ছে। যা দলের নেতাকর্মীরা মেনে নেয়নি।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব