একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের ব্যানারে অবস্থান নিয়ে গত ৪৮ বছর ধরে বারবার মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড পরিবর্তন করে তালিকাভুক্তির নামে হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযােদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় বক্তরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন থাকা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে ভুয়া তথা অমুক্তিযোদ্ধাদের বিতাড়ণ ও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। বরং বিভিন্ন কায়দা-কৌশলে ভুয়া তথা অমুক্তিযােদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন জেলা থেকে সমবেত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে এসব দাবি তুলে ধরেন তারা।
মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নসহ ১৫ দাফা দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। বক্তব্য রাখেন একাত্তরের মুক্তিযােদ্ধা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সমবেত মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, ১৯৭২ সালের ৭ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করলেও সে গেজেট অনুসরণ না করে গত ৪৮ বছরে যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছেন, তারা বারবার মুক্তিযােদ্ধার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড পরিবর্তন করে তালিকাভুক্তির নামে হাজার হাজার অমুক্তিযােদ্ধাকে অন্তর্ভুক্ত করে রণাঙ্গনের প্রকৃত মুক্তিযােদ্ধাদের শুধু কলঙ্কিতই করেন নি, ভুয়া তথা অমুক্তিযােদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তি করেছে। এ ধারা এখনো অব্যাহত থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের মান-সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যমান অন্যান্য সমস্যার কারণে মুক্তিযােদ্ধারা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এমন কি পারিবারিকভাবেও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আজও একাত্তরের রণাঙ্গনের যেসব মুক্তিযােদ্ধা জীবিত আছেন তারা সবাই জীবনসায়াহ্নে উপনীত। নানা রকমের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত। অনেকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও করতে পারেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুক্তিযােদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকা এবং বিভিন্ন কায়দায় ভুয়া তথা অমুক্তিযােদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করা ও তা অব্যাহত রাখার মত কঠিন বাস্তবতা বিদ্যমান রয়েছে। ফলে ষাটোর্ধ্ব বয়সে উপনীত হয়েও মুক্তিযােদ্ধাদের ঘরে বসে থেকে এসব অন্যায়-অবিচার প্রত্যক্ষ করার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না।
বক্তারা আরও বলেন, মুক্তিযােদ্ধারা আশা করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সরকার ‘মুক্তিযােদ্ধাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি’ প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন থাকা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিতাড়ণ ও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার