৩ এপ্রিল, ২০২০ ১৬:৪৫

করোনায় মানবতার পাশে ছাত্রলীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

করোনায় মানবতার পাশে ছাত্রলীগ

মানবতার পাশে ছাত্রলীগ

বাংলাদেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সারাদেশে মানুষের পাশে যেসব সংগঠন দাঁড়িয়েছে, তাদের অন্যতম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। অন্য যে কোনো সংগঠনের চেয়ে মানবতার সেবায় এগিয়ে ছাত্রলীগের নেতারা। কেউই যখন আক্রান্ত হয়নি তখন থেকেই জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট, মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ শুরু করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

এখন ঢাকাসহ সারাদেশে সাধ্যমতো খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুধু খাদ্য সামগ্রীই নয়, মোবাইল ফোনে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যসেবা, অসুস্থ মানুষের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, বিনা পয়সায় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাস, মসজিদ, বাজার ও মোড়ে মোড়ে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মানুষে বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে রাতভর খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেটের উপর ঘুমিয়ে পড়ছেন ছাত্রলীগের নেতা- এমন ছবিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই দুর্যোগে ছাত্র সংগঠন হিসেবে এখন সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসায় ভাসছে ছাত্রলীগের মানবিক কর্মকাণ্ড। 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের যে কোনো ক্রান্তিকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে ছিল। এই ভয়াবহ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ শুরু করি। এরপর খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছি। সারাদেশে সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতে নির্দেশ দিয়েছি সাধ্যমতো মতো নিজেদের অর্থায়নে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। মানবতার সেবায় নিজেদের কাজে লাগাতে।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে, এই দুর্যোগেও আমরা বসে নেই। সাধ্যমতো কাজ করছি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অসহায়-গরীব মানুষের পাশে দাড়াতে নির্ঘুম রাত পার করছে। মাস্ক, স্যানিটাইজার ও খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেছে জেলা-মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা।’  

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ গত শুক্রবার থেকে খাবার বিতরণ করে আসছে, বুধবার থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণে নেমেছে মহানগর উত্তর ছাত্রলীগও। এসব খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, আলু, পিয়াজ ও তেল। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির ফলে খেটে-খাওয়া মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী, আজীবন সদস্য দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অসহায় মানুষের কথা ভাবেন, এ জন্য বরাদ্দও দিয়েছেন। তাই তাদের জন্য আমাদের এই সামান্য আয়োজন।’ 

মিরপুর মাজারগেট এলাকায় ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করেন মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছাত্রলীগ জাতির যে কোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে ছিল, আগামী দিনেও থাকবে। আমরা আশা করি এই দুর্যোগের সময়ে সমাজে বিত্তবান ও উঁচু শ্রেণির মানুষগুলোও এগিয়ে আসবে। 

শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেও জেলা-মহানগর ও উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রাতদিন মানুষের সেবায় কাজ করছেন। মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌঁছানোর পাশাপাশি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। 

ক্যাম্পাস ছুটি হওয়ায় অনেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এখন নিজ নিজ গ্রামে অবস্থান করছেন। সে কারণে স্ব স্ব এলাকার নেতাকর্মী, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে এগিয়ে আসছেন মানবতার সেবায়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাহাদাত হোসাইন রকি এখন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে অবস্থান করছেন। তিনি গত তিনদিনে কয়েকজন ছোট ভাই-বড় ভাই ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে ৫শ’ পরিবারে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। এরমধ্যে ছিল ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি আলু, আটা ও সাবান। এ প্রসঙ্গে রকি বললেন, মানুষ মানুষের জন্য। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে এলাকার গরীব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। সবারই উচিত সাধ্য মতো কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোর পাশে থাকা।

এ প্রসঙ্গে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিক রনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় নিদের্শনা মোতাবেক আমরা জেলা ছাত্রলীগ গরীব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা শহরের গরীব, অসহায় রিকশাচালক, শ্রমিকদের মাঝে চাল, ডাল, পিয়াজ, আলু, সাবান, স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেছি। এই দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবো। মোবাইল ফোনে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যসেবা, অসুস্থ মানুষের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, বিনা পয়সায় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেছে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দী থাকা নিম্নআয়ের মানুষগুলো যেন সঠিক চিকিৎসা পায় সেজন্য এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। 

সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলা ছাত্রলীগ ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি। মানুষে পাশে দাঁড়িয়েছি। যতদিন এই সংকট থাকবে ততদিন মানুষের পাশে থাকবো। 

করোনা সহায়তা তহবিল ফান্ড গঠন করেছে কক্সাবাজার জেলা ছাত্রলীগ। এছাড়াও সংগঠনের উপ দফতর সম্পাদক মঈন উদ্দিন নিজস্ব অর্থায়নে গরীব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশে আমরা এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। যাদেরকে সহায়তা করা হচ্ছে, তারা সবাই কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ। আমরা আছি মানবতার পাশে। এ সংকট কেটে যাবেই ইনশাআল্লাহ। 

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইকবাল হাসান রুবেল জানালেন, ভাইরাস সংক্রমণ যেন না হয় সে জন্য মানুষের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে টিম গঠন করে দিয়েছি। টিমের সদস্যরা যেখানেই জটলা দেখছেন সেখানে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এতে ভাল ফলও হচ্ছে। এছাড়া খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর