'আইন কানুনের বেড়াজাল নয়, ব্যবসাবান্ধব উদারনীতি চাই। চট্টগ্রামকে কার্যকর বাণিজ্যিক রাজধানী করতে যা যা করা দরকার, সব কিছুই করা এখন সময়ের দাবি।'
প্রাক-বাজেট প্রত্যাশা সম্পর্কে এমনটিই জানালেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর
সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন।
সোমবার ৩১ মে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে 'ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে' মতবিনিময় কালে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি অত্যাসন্ন বাজেটে কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেছেন, চট্টগ্রামে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ সংকট থাকলে তার সমাধান সরকার করবে বলে আশা রাখি। এছাড়া কাঁচামাল আমদানিতে এনবিআরের নজরদারি, বিশেষ করে দেশীয় ব্যাটারি শিল্পকে বাঁচাতে শোরুমগুলোতে অভিযান এবং ইজিবাইক পরিচালনার উপর নজরদারি আরোপের গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
তরফদার রুহুল আমিন বলেন, বিদেশে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিয়ে যাওয়া অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে দেশের শিল্প অগ্রযাত্রা আরও ত্বরান্বিত হবে। বিশ্বের অনেক দেশেই ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাইরে নিয়ে যাওয়ার অবাধ সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে সেটি নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে অনেকটাই যেন সীমাবদ্ধ। এই ক্ষেত্রে সরকারের উদারনীতি গ্রহণ করবে বলে আশা করে তিনি বলেন, কোভিডের সময়ে বিদেশে যাতায়াত সীমিত হয়ে পড়ায় উন্নত দেশের বিজনেস মিটিংগুলো 'বিজনেস হাব' হিসেবে পরিগণিত হওয়া ইউএইতে হচ্ছে। সিঙ্গাপুর থেকে গ্লোবালি বিজনেস নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা খাতে অত্যন্ত মেধাবী ও দূরদর্শী হওয়া সত্ত্বেও ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিতে না পারায় অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ৪২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রিজার্ভ রয়েছে। দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল পোর্টফোলিও দেখে একটি বিশেষ হারের মূলধন বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। এবং এক্ষেত্রে অডিট ব্যালেন্স বাধ্যবাধকতা থাকলে অথনীতি আরো গতিশীল হবে।
তরফদার রুহুল আমিন বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরকে স্মোথলি অপারেশনে রাখতে হবে। সরকার পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বানিয়েছে। বে টার্মিনালের কাজ চলছে। এ টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে। এটি অনেক বড় কাজ। বন্দরের নিজস্ব একটি টার্মিনাল থাকবে সেখানে। একে ফার্স্ট ট্রেকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, এখনও চট্টগ্রাম শহরে যানজটে অসহনীয় অবস্থা। আট ঘণ্টা ওয়ার্ক টাইমের তিন-চার ঘণ্টা রাস্তায় চলে যাচ্ছে। নগরের এই যানজটের অচলাবস্থা নিরসনে এ প্রকল্প দ্রুত বে টার্মিনাল এলাকায় ডেলিভারি ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল তৈরি করা হচ্ছে। তিন বছর আগে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, বন্দরের ভেতর প্রতিদিন ৪ হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়। এক কনটেইনারে ৩টি ট্রাক ধরলে ১২ হাজার ট্রাক চলাচল করছে। আশপাশে কনটেইনার ডিপো আছে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি বাইরে নিয়ে যাওয়া হোক। তারই অংশ হিসেবে এখন কাজ চলছে।
সিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি বলেন, সিসিটি, এনসিটি ও মেইন জেটি ২০-৩০ বছর আগে হয়েছে। নতুন জেটি যেগুলো হচ্ছে সেগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় মাথায় রেখে উঁচু করতে হবে। হেজার্ড ম্যাটেরিয়াল নিয়ে বন্দর কাজ করছে। বন্দর আরও স্ক্যানার কিনবে। পানগাঁওতে স্ক্যানার বসাতে হবে।
ব্যাংকঋণ খেলাপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সুস্পষ্ট দাবি বিজনেসম্যানদের সুরক্ষা দিতে হবে। কোনো শিল্পগ্রুপের একটি কারখানা ব্যাংকঋণে খেলাপি হলে যদি অন্য কারখানাগুলো সচল থাকে তাহলে রুগ্ন কারখানাটিকে সাপোর্ট দিতে পারবে। একটি কারখানা খেলাপি হলে বাকি কারখানা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়ে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা মহামারির কারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকঋণ শোধের জন্য আরও এক বছর সুযোগ দেওয়া হোক।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দর, জ্বালানি হাব হচ্ছে। বন্দরের বে টার্মিনাল হচ্ছে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল হচ্ছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা কাঁচামাল আমদানি করি। কমপ্লায়েন্স মেনটেইন করি। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী বেনামে কাঁচামাল আমদানি করে প্রোডাক্ট তৈরি করে। এক্ষেত্রে এনবিআরের কঠোর নজরদারিতে আনা উচিত।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন/ রিয়াজ হায়দার