১৬ অক্টোবর, ২০২১ ২৩:৫৭
নির্মূল কমিটির ওয়েবিনারে বক্তারা

গণহত্যার স্বীকৃতি ও পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণহত্যার স্বীকৃতি ও পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে

বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন জাতীয় দাবি। এ জন্য সরকারকে অবিলম্বে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই দাবি আদায়ই হোক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অন্যতম লক্ষ্য।

আজ শনিবার ‘বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং পাকিস্তানি গণহত্যাকারীদের বিচার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।

সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সর্বইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি মানবাধিকার নেতা তরুণকান্তি চৌধুরী, প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, নির্মূল কমিটির সুইজারল্যান্ডি শাখার সভাপতি মানবাধিকার নেতা খলিলুর রহমান।

শাহরিয়ার কবির বলেন, এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে আমাদের মনে রাখতে হবে ২০২১ সাল বাংলাদেশের গণহত্যারও ৫০ বছর। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির কারণে বর্তমান সরকার ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি, যা গণহত্যাকারীদের বিচারের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ও বিদেশের যাবতীয় বাধা অগ্রাহ্য করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া আরম্ভ করেছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই বিচার প্রক্রিয়া এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। কী কারণে দুটি ট্রাইব্যুনালকে কমিয়ে একটিতে নামিয়ে আনা হল কী কারণে ট্রাইব্যুনালে এখনও পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী এবং গণহত্যাকারী অন্যান্য সংগঠনের বিচার হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির মতো বিষয়গুলোতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখন জাতীয় দাবি। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে নির্মূল কমিটির সহযোগিতায় কাজ করলে এই দাবি পূরণ হবে বলে আমি মনে করি। আমাদের দূতাবাসগুলো বাংলাদেশের একাত্তরের গণহত্যার নৃশংসতা, ভয়াবহতা বহির্বিশ্বের নিকট তুলে ধরার কাজে সর্বদা নিয়োজিত। তারপরেও আমাদের ত্রুটি বিচ্যুতি আছে।

সাংবাদিক আরাফাত মুন্না বলেন, পাকিস্তানি গণহত্যাকারীদের বিচার বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের চাওয়া। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায়, সেই চাওয়া আদৌ পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধের ২৭ আপিল ও ২ রিভিউ আবেদন ঝুলছে। ট্রাইব্যুনালে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারসহ অনেক মামলা পেন্ডিং। তদন্ত সংস্থায় ৭০০ অভিযোগ অপেক্ষমাণ। বলা চলে গোটা যুদ্ধাপরাধ বিচারটাই থমকে আছে। যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত করা হোকÑ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে এটাই অনুরোধ করবো।

অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন, অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডা. একরাম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য শাখার নির্বাহী সভাপতি মানবাধিকার নেতা সৈয়দ এনামুল ইসলাম, বেলজিয়াম শাখার সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেত্রী আনার চৌধুরী, দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক আরাফাত মুন্না, ৭১ টিভির সাংবাদিক মিল্টন আনোয়ার, দৈনিক ভোরের কাগজের সাংবাদিক ঝর্ণা মনি এবং নির্মূল কমিটি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা কাজী মুকুল।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর