টানা ১৩ বছর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে গত সোমবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আবুধাবি আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরকালীন আবাসস্থল থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ নির্বাচনের পর থেকে এ ১৩ বছর আমরা পূর্ণ করেছি। এক টানা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।’
দেশকে কেউ আর পেছনে টানতে পারবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একটা কালো অধ্যায় ৭৫ এর পর ছিল, এই কালো মেঘ কেটে গেছে।’
ক্ষমতা পাওয়া জনগণের সেবা করার সুযোগ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভোট এবং সহযোগিতায় রাষ্ট্র পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছি। আমার দৃষ্টিতে এটা হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। ক্ষমতাটা আমার কাছে কোন ভোগের বস্তু নয়, ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ। এবং যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন সেটা পূর্ণ করা। পরপর তিনবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছি।’
বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে এগিয়ে যাবে। এই বাংলাদেশকে আর কখনো কেউ পেছনে টানতে পারবে না। একটা কালো অধ্যায় ৭৫ এর পর ছিল, এই কালো মেঘ কেটে গেছে। এখন আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধি, দারিদ্র মুক্ত একটি দেশে। যে দেশ সম্মানের সাথে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। বাঙালি জাতি মাথা উচু করে চলবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো।’
৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিক বাহিনীতে হত্যাকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে আপনারা যদি একটু দেখেন লক্ষ্য করবেন- ৭৫ এর পর এদেশে ১৯ টা ক্যু হয়েছে। একেকটা ক্যু হয়েছে সেনা বাহিনীর বহু সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, বিমানবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে, সব অস্থিরতা ছিল। বার বার ক্ষমতা বদল হয়েছে, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল, গণতান্ত্রিক ধারা কখনোই অব্যহত ছিল না।’
দেশের জনগণ ও প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যারা প্রবাসী আপনাদের কাছ থেকেও আমরা সমর্থন পেয়েছি, সহযোগিতা পেয়েছি। সে কারণেই আজকে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে এটা সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে আসবো। আজকে অন্তত এইটুকু বলতে পারি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সুযোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ময়াদা পেয়েছে, স্বীকৃতি পেয়েছে।’
ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশে কোন দরিদ্র থাকবে না। আজকে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যে বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ভূমিহীন থাকবে না। আপনারা জানেন আমাদের সরকার থেকে তাদের ভূমি ও জমি নিয়ে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছে। তাদের জীবনটাই পাল্টে যাচ্ছে। তাদের এখন অসহায় হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় না। আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাজেই প্রত্যেকটা মানুষের জীবন মান উন্নত করার পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর পুষ্টি নিরাপত্তাও আমরা দিচ্ছি। আমাদের আয়ুস্কালও বেড়ে এখন ৭২ বছর থেকে এখন ৭৩ বছরে এসে পড়েছে। এখন আর হতদরিদ্র ভাবটা মানুষের মাঝে নেই্, থাকবেও না তার জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সবাইকেই কাজ করতে হবে। সবাইকেই অবদান রাখতে হবে। একদিনেও তো সব হয় না। তাই একে একটা গাছ লাগালোও ফল খেতে সময় লাগে।’
গত সোমবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আবুধাবি আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ০৮ মার্চ আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে ৪টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সফর শেষে আগামী ১২ মার্চ দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সফরকালীন আবাসস্থল উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট প্রান্তে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আবুধাবি প্রান্তে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, এফবিসিআইআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
এসময় রাস আল খাইমার প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়কমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি তাজ উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আবু জাফর। এর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাদেশিক শহর রাস আল খাইমার বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।