দেড়মাস আগে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের সংগঠন ‘আইনজীবী সমিতি’র নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু ফলাফল এখনও ঝুলে আছে। সম্পাদক পদের ভোট পুনর্গণনা দাবি ও এক পর্যায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগে ঝুলে থাকা সে ফলাফলকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, মারামারি, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
আজ বুধবার বিকালে আইনজীবী সমিতি ভবনের তিনতলায় সম্মেলন কক্ষের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
দু'পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি, কিলঘুষির পর কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতা অজি উল্লাহ নেতৃত্ব একটি দল নিজেদের ‘নির্বাচন উপ-কমিট ‘ দাবি করে ভোট পুনর্গণনা করে ফল ঘোষণা করতে সমিতির সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে গেলে হট্টগোল শুরু হয়। পরে তা মারামারি, ভাঙচুরে গড়ায়। এ কক্ষেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ব্যালটসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রাখা আছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে অজি উল্লাহ নেতৃত্বাধীন স্বঘোষিত সাত সদস্যের উপ-কমিটি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফল ঘোষণা করবে বলে জানায়। ভোট পুনর্গণনা করে ফল ঘোষণা করার কথা বলেন অজি উল্লাহ।
এদিকে এ উপ-কমিটিকে অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়ে বুধবার দুপুরে একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ সংবাদ সম্মেলনের পর বিকালে সাড়ে ৩টায় অজি উল্লাহর নেতৃত্বে স্বঘোষিত উপ-কমিটির সদস্যরা ভোট পুনর্গণনা করে ফল ঘোষণার জন্য ওই কক্ষে ঢুকতে গলে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এসময় দু'পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে প্রথমে ধাক্কধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা তালা ভেঙে কক্ষে ঢুকে পড়েন। তখন কক্ষের বাইরে থাকা বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা কক্ষের কাচ ভাঙচুর করে কক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেন। তখন কক্ষের ভেতরে-বাইরে থাকা আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা বিদ্যুৎ চালু করতে গেলে হাতাহাতি, কিলঘুষির ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষকেই এসময় পাল্টাপাল্টি স্লোগানও দিতে দেখা যায়।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনের ৫১টি বুথে সমিতির ২০২২-২০২৩ মেয়াদের এ নির্বাচনের ভোট নেওয়া হয়। মোট ৮ হাজার ৬২৩ জন ভোটারের মধ্যে দুই দিনে ভোট দেন ৫ হাজার ৯৮৩ জন। পরের দিন অর্থাৎ গত ১৭ মার্চ রাতে ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, সভাপতিসহ ছয়টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল এবং সম্পাদকসহ আটটি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা এগিয়ে। এনিয়ে দুই প্যানেলের আইনজীবীদের উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ফলাফল ঘোষণা না করেই স্থান ত্যাগ করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির সদস্যরা। এর একদিন পর জানা যায় এ ওয়াই মশিউজ্জামান নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
১৪টি পদের বিপরীতে এবার সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ৩৩ জন। এর মধ্যে কার্যকরী কমিটির সাতটি সদস্য পদের ভোট ডিজিটাল পদ্ধতিতে নেওয়া হয়।
গত বছর এ নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। আর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন রুহুল কুদ্দুস কাজল। নির্বাচনের পরপরই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মতিন খসরুর মৃত্যুতে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামীপন্থী অংশ সভাপতি হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের নাম ঘোষণা করলে বিএনপি সমর্থকরা আপত্তি তোলেন। এনিয়ে বিশেষ সাধারণ সভায় হট্টগোলও হয়। পরে সভাপতি পদটি অমীমাংসিত রেখেই এক বছর চলে সমিতির কার্যক্রম।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত