ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে চলতি বছরে তৃতীয়বারের মত তলিয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষের বাড়ি-ঘর, আবাদী জমির ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গবাদিপশু ও জীবিকার সকল মাধ্যম।
সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি পানি চলে আসায় বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আজ এক বিবৃতিতে এবি পার্টির আহ্বায়ক ও সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী এবং সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বন্যা দুর্গত অঞ্চলগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
১৪ দফা প্রস্তাব;
১. উপকূলীয় এলাকার বাঁধগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধি ও মানসম্পন্ন করে তৈরি করা বর্তমানে অত্যাবশ্যকীয়, আম্পানের সময় প্রায় ১০-১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস এসেছে। তাই এ পরিমাপ মাথায় রেখে বাঁধগুলোকে কমপক্ষে ১৮-২০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট করে নির্মাণ করা উচিত;
২. নদী ব্যবস্থাপনা, নদীরক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্গতদের পুনর্বাসনসহ সার্বিক বন্যা উত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাধুনিক উন্নত প্রযুক্তি, ধারণা ও উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যবহারিক - অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি - দরকার স্থায়ী ও কার্যকর টাস্কফোর্স/কমিশন গঠন;
৩. বনায়ন এবং পুনর্বনায়নের সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ ও তার যথাযথ সংরক্ষণ করা যাতে পরিশোষণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্যার পানির উচ্চতা হ্রাস ঘটতে পারে;
৪. ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন ও বিল্ডিং কোডের যথাযথ প্রয়োগ, শস্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ তথা, বন্যা প্রতিরোধী বা বন্যা সহনক্ষম শস্য চিহ্নিতকরণ ও রোপণ করা এবং শস্য রোপণ মৌসুমের অভিযোজন করতে হবে;
৫. প্লাবন ভূমিসমূহকে বিভিন্ন জোনে বিভক্ত করা এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভূমি ব্যবহার জোন তৈরি করা;
৬. জরুরি তহবিল গঠনে সরকার, ব্যবসায়ী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন সহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাত ও এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে;
৭. বন্যার পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আরো দ্রুত, আধুনিক ও শক্তিশালী করতে হবে। সঠিকভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ পেতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স ও জাপান সহ বিভিন্ন দেশের মডেল বিশ্লেষণ করে আমাদের উপযোগী ও কার্যকর সতর্কীকরণ মডেল প্রস্তুত করতে হবে;
৮. ‘আশ্রয়ণ’ বা ‘গুচ্ছগ্রাম’ প্রকল্পের মতো উদ্যোগের আওতায় বাঁধের ওপর অবৈধভাবে বসবাসরত মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে যেন কৃষিভূমির পাশাপাশি প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয়;
৯. সশস্ত্র বাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে বন্যা প্রবণ অঞ্চলগুলোতে দশ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষন দেয়া যাতে যে কোন দূর্যোগে জরুরী সেবায় নিয়োজিত বেসামরিক সংস্থা ও বাহিনীর পাশাপাশি তারা বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে;
১০. কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলাকে সংযুক্তকারী ২৯.৭৩ কিলোমিটারের দীর্ঘ সড়কটি ভেঙ্গে আধুনিক মানের জল-যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে ঢলের পানি হাওর থেকে দ্রুত নদীতে নামতে পারে;
১১. চীন ও ভারতের সাথে অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও সমতার ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক সাক্ষর করতে হবে অবিলম্বে, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ফোরামে যেতে হবে;
১২. বর্ষার অতিরিক্ত সুপেয় পানি বৃহৎ জলাধার করে সংরক্ষন করতে হবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যায়;
১৩. সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে গত ৫০ বছরে ঘটে যাওয়া দেশে বন্যার সংখ্যা, সময় ও কাল, অঞ্চল ভেদে এর প্রকৃতি ও ধরন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে ব্যাপক আকারে সমীক্ষা ও গবেষণা প্রকাশ করতে হবে, এই বছরের মধ্যে, যাতে আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই যথাযথ পরিকল্পনা হাতে নিতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন;
১৪. দিন শেষে একটি বাঁধ রক্ষার দায়িত্ব বা বন্যা থেকে বাঁচা কেবল রাষ্ট্রের একার হাতে ছেড়ে দিলে হবে না, ওই এলাকার মানুষেরও একটি আলাদা দায়বদ্ধতা রয়েছে। এবি পার্টি মনে করে - জনসাধারণ, রাষ্ট্র ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি ও সংস্থার সম্মিলিত প্রয়াসই পারে বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করতে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত