আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বিএনপি নেতারা ১০ ডিসেম্বরের স্বপ্ন দেখছেন। ১০ ডিসেম্বর বলে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ কোনো ভূঁইফোড় সংগঠন নয়। কোনো কচু পাতার পানি নয়, যে ধাক্কা দিলে টলমল করে পড়ে যাবে। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া দল। ৭৩ বছরের আওয়ামী লীগের শেকড় বাংলার মাটির অনেক গভীরে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর শক্তি বিএনপি বা কারো নেই। সরকার পতনের এসব হুঙ্কার বন্ধ করুন।
শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ জামাতখানায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পল্টন থানা ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বিএনপি ক্ষমতা যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। কিন্তু তাদের মধ্যে দেশ পরিচালনার মেধা ও দক্ষতা নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচি যদি গণতান্ত্রিকভাবে পালন করতে পারেন আমাদের পক্ষ থেকে বাধা নেই। আন্দোলনের দোহাই দিয়ে দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা, নাশকতা করে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে দমন করবে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মোকাবেলার প্রয়োজন পড়বে না। আপনাদের মোকাবেলার জন্য সরকারই যথেষ্ঠ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের আলোকে বর্তমান সরকারের অধীনে হবে জানিয়ে হানিফ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনকে আরও অধিক গ্রহণযোগ্য করার জন্য যদি সংবিধানের মধ্যে থেকে আপনাদের কোনো পরামর্শ থাকে আপনারা দিতে পারেন। সরকার ও নির্বাচন কমিশন অবশ্যই বিবেচনা করবে।
নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনে কোথাও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন কমিশন ঢাকায় বসে সিসিটিভিতে দেখেছে, কোনো বুথে নাকি একজন ভোট দেয়ার সময় আরেকজন গিয়েছে। অন্যায়ভাবে কেউ বুথের মধ্যে গেলে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায়। কিন্তু একজনের কারণে ঐ এলাকার ২-৩ হাজার ভোটারের অধিকারকে বঞ্চিত করা কোনোমতেই সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তারপরও নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সংস্থা। তারা প্রমাণ করেছে যে, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং এই সিদ্ধান্তের ফলে এটাও প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করে না।
বিএনপি নেতাদের রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্যের জন্য দেশের জনগণ বিএনপির উপর স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দিবে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, গত পরশুদিন চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে বললেন, র্যাবের উপরে শুধু নিষেধাজ্ঞা না, বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য। লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যেতে হয়। দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা এই দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করেছে। তিনি রাষ্ট্রদোহের কাজ করেছেন। এর আগে ২০১২ সালে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া জিএসপি বাতিল করে গার্মেন্টস সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। তারা স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাসী নয়। বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা এনে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চায়।
তিনি বলেন, আমি মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই, ধিক্কার জানাই। মির্জা ফখরুলকে বলবো, আপনি যে রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দিয়েছেন এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিন। আপনি জাতির কাছে ক্ষমা চান। আর না হলে দেশের জনগণ বিএনপির উপর স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দিবে।
ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
পল্টন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক আবুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তবা জামান পপির সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত