দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সরাসরি খুলনা শহরে এসে হোটেলে অবস্থান করে পছন্দের ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুন্দরবন যাত্রা করা যায়। আবার হোটেলে না ওঠে সরাসরি ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও নির্ধারিত সময়ে জাহাজে চড়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) সুন্দরবন। এখানকার সবকিছুই বিস্ময়ে ভরা। প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ছয়বার তার রূপ বদলায়। এসব মোহনীয় রূপের সাজ পর্যটকদের মোহিত করে তোলে। এ ছাড়া কচিখালী সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ তো রয়েছেই। এ কারণেই দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক এখানে ছুটে আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
সুন্দরবনের করমজল বন্য ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র, হারবাড়িয়া ইকো সেন্টার, কটকা, কচিখালী ও নীলকমল অভয়ারণ্য, শেখেরহাট টেম্বপল, কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার, মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্য নামের স্পটগুলো পর্যটকদেরর জন্য নির্ধারিত। এসব স্পটে কুমির প্রজনন, অসুস্থ হরিণের পরিচর্যা, হাজার বছরের পুরনো স্থাপনার ধ্বংসাবশেষসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর্ উপভোগ করা যাবে। এসব স্পটগুলোতে বনের মধ্য দিয়ে ১ থেকে ৫ কিলোমিটার পায়ে হাঁটা কাঠের তৈরি পথ (ওয়াক ওয়ে) করা আছে। পর্যটকরা ইচ্ছা করলে হেঁটে হেঁটে বনের ভেতরের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে পারবেন। ভাগ্যসহায় হলে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গুইসাপ, কাঁকড়া অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানো দৃশ্যও দেখতে পারেন। অল্প সময়ে কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমণের স্বাদ নিতে হলে করমজলই শ্রেষ্ঠ। মংলা বন্দর থেকে নৌপথে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় চড়ে এখানে যাওয়া যায়। এখানে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ছোট-বড় অসংখ্য কুমির দেখতে পাবেন। সুন্দরবনের আরেকটি অভয়ারণ্য হিরণপয়েন্ট। এটি পুরো সুন্দরবন এলাকার বনেদি অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভারতীয় সীমান্ত থেকে ২৫ মাইল পূর্বে সুন্দরবনের সর্ব দক্ষিণে হিরণপয়েন্টে ফরেস্ট অফিস ছাড়াও মংলা পোর্টের শাখা অফিস রয়েছে। আছে নৌবাহিনীর ডেরা। ফরেস্ট অফিসের উত্তরে নদীর ঠিক ওপারে বনটির নাম কেওড়াশুটি। এখানে প্রচুর কেওড়া গাছ আছে বলেই নামটা এমন। চারদিকে নদীঘেরা। পূর্ব-পশ্চিমে দুই মাইল আর উত্তর- দক্ষিণে আধা মাইলের কিছু বেশি জায়গার মাঝখানে একটা অংশে গাছপলার পরিমাণ কিছুটা কম। ভেতরে একটা মিঠাপুকুরের মতো আছে। সেখানে হরিণ পানি খেতে আসে। ভাগ্যসহায় হলে বাঘের পানি পানের দৃশ্যও দেখা যেতে পারে। আছে মাঠের পর মাঠ শন-বন। আর হেতালের জঙ্গল। তবে সাবধান থাকতে হবে বাঘ মামার খপ্পর থেকে। কারণ ওরা এসব বনে ছদ্মবেশে ঘাপটি মেরে থাকে। তবে বলে রাখা ভালো হিরণপয়েন্ট দেখতে হলে অবশ্যই দুই দিন সময় হাতে নিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট জাহাজই উপযুক্ত। খুলনা শহরে বর্তমানে বিদেশি মানের হোটেলসহ মানসম্মত অনেক হোটেল আছে। এর মধ্যে অন্যতম অভিজাত হোটেল সিটি ইন, হোটেল ক্যাসল সালাম, হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল, টাইগার গার্ডেন। এসব হোটেলের ভাড়া একটু বেশি। তবে এর থেকে অনেক কম ভাড়ার অনেক হোটেল খুলনা শহরে আছে।
*সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা।