মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আইসিবির ৫১৪টি মার্জিন হিসাবের প্রতিবেদন চেয়ে ফের চিঠি দুদকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে ৫১৪টি মার্জিন হিসাবের তদন্ত প্রতিবেদন পেতে দ্বিতীয় দফায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আইসিবির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো গতকালের চিঠিতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল দুদক থেকে এ চিঠি আইসিবিতে পাঠানো হয়। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দুদকের জনসংযোগ দফতর থেকে এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, অতি জরুরি ভিত্তিতে আগামী ২৫  ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্রের মূল কপি সংরক্ষণ করে সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহের জন্য আবারও অনুরোধ করা হলো। বিষয়টি অতি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।

দুদকের চাহিদার তালিকায় রয়েছে, আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে দেওয়া ২০১৬ সালের ২০ মার্চের তথ্যানুসারে প্রতিষ্ঠানটিতে ৬৮১টি মার্জিন হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে ৫২৯টি হিসাবে সম্পদের ঘাটতি রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৫টি মার্জিন হিসাবের তদন্ত করা হয়েছে। বাকি মার্জিন হিসাবগুলোর বিষয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত দলের মাধ্যমে দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য আবারও অনুরোধ জানিয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর ওই প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি  দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি পাঠায়নি আইসিবি কর্তৃপক্ষ। তদন্ত প্রতিবেদনে ওই বছরের ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠানোর জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল দুদক। মাঝে বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে তাগিদ দেওয়া হলেও মেলেনি প্রতিবেদন। এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আইসিবির কাছে ওই তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। দুদক থেকে তাদের সব মার্জিন হিসাবে নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা কষ্টসাধ্য এবং অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাই আইসিবিকে ৫১৪টি মার্জিন হিসাবের বিষয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। এতে একদিকে সময়ের অপচয় যেমন কম হবে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদেরও অযথা হয়রানি হতে হবে না। কারণ দুদক চায় হয়রানিমুক্ত অনুসন্ধান। এ জন্য তাদের কাছে ওই প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, আইসিবি ও এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডে (আইএসটিসিএল) ২৩৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পিটি হিসাবগুলোতে (পাবলিক ট্রেড হিসাব) নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ সীমার অতিরিক্ত ১২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়। এর সঙ্গে জড়িত তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী ছানাউল হক, উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিপু সুলতান ফারাজীসহ ছয়জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এ অনিয়মের কারণে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

সূত্র আরও জানায়, আইএসটিসিএলের প্রধান কার্যালয়ের ১৯১টি পিটি হিসাবে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২৩৭ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়। এ হিসাবগুলোতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ সীমার অতিরিক্ত ১২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা দেয়। এ পিটি হিসাবগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মূলত ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের প্রথম দিকেই মার্জিন ঋণ সীমার ব্যাপক অনিয়ম ঘটিয়ে সিকিউরিটিজ কেনা হয়। হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১০৩২ নম্বর পিটি হিসাবে ডেবিট স্থিতি থাকা অবস্থায় কাজী ছানাউল হকের মেয়াদকালে ২০০৮ সালের ১৯ অক্টোবরে ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯১ টাকার ক্রেডিট স্থিতির ওপর ১৮ লাখ টাকা এবং ২০ অক্টোবর ৫১ হাজার টাকা ডেবিট স্থিতির ওপর পুনরায় ৭ লাখ টাকা উত্তোলন করতে দেওয়া হয়েছে। যা বিধিবহির্ভূত এবং গুরুতর অনিয়ম। ৪৪৮১ নম্বর পিটি হিসাবে প্রায় সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা ডেবিট স্থিতি থাকা অবস্থায় ছানাউল এবং উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিপু সুলতান ফারাজীর মেয়াদে ২০১০ সালের ৪ অক্টোবর সিকিউরিটিজ অন্য প্রতিষ্ঠানের লিংক বিও-তে স্থানান্তর করা হয়েছে। এটি শতভাগ নিয়ম লঙ্ঘন। এ ঘটনায় আইসিবি ব্যাংক ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। আর তদন্তে মিলেছে এর সত্যতা।

কাজী ছানাউল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে আইসিবির বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া দুদকের অনুসন্ধানের তদারক করছেন কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর