সোমবার, ৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

গ্রাম শহর সবখানেই উন্নয়ন হচ্ছে

--------- ভূমিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘একসময় উন্নয়নটা শুধু ঢাকা ও রংপুরকেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে সারা দেশেই উন্নয়ন হচ্ছে। এখন গ্রাম ও শহর সবখানেই উন্নয়ন হচ্ছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারই ছিল গ্রাম হবে শহর। অর্থাৎ আমরা শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’ গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনাগাঁওয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজনে ‘চ্যালেঞ্জেস অব রিয়েল স্টেট ইন আরবানাইজেশন অ্যান্ড ডিসেন্ট্রালাইজেশন’ শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে রাজধানী ঢাকার নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন ডিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট ওসামা তাসীর। তিনি বলেন, নগরায়ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও শহরগুলো গ্রামের চেয়ে অর্থনীতিতে বেশি ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির ৬৫ শতাংশই আসছে নগর থেকে। জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টাস : দ্য ২০১৮ রিভিশন’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ নগরে বাস করবে। বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রামের চেয়ে বেশি মানুষ বাস করবে নগরে। পৃথিবীর ৩১টি মেগা সিটির মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ১১তম। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকা পরিণত হয়েছে বিশে^র দ্বিতীয় বসবাসের অযোগ্য নগরে।

সেমিনারে জানানো হয়, রপ্তানিমুখী শিল্পের ৮০ শতাংশই অবস্থিত বৃহত্তর ঢাকায়। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকা- কতটা কেন্দ্রীভূত তার প্রমাণ পাওয়া যায় ব্যাংকের আমানত এবং ঋণের পরিসংখ্যানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের ৬১ শতাংশ আসে ঢাকা থেকে এবং ২২ শতাংশ আসে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে। অন্যদিকে মোট ঋণের ৬৭ শতাংশ বিতরণ করা হয় ঢাকায় এবং ১৯ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগে। বিকেন্দ্রীকরণের জন্য বিভিন্ন নীতিসংশ্লিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর অত্যধিক নির্ভরতা, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, দুর্বল পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে উদ্যোগগুলো আলোর মুখ দেখেনি।

বক্তারা জানান, আবাসন খাত জিডিপিতে ৬.৩১ শতাংশ অবদান রাখছে। রিহ্যাবের তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালে আবাসন খাতে কর্মসংস্থান ছিল ২৮ লাখের মতো। ২০২০ সাল নাগাদ এ খাতে প্রায় ৩৩ লাখ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। আবাসন খাতের সমস্যা তুলে ধরে এই খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, আবাসন খাতের বিকাশে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো জমি ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি। গুলশান, বারিধারাসহ ঢাকার অন্যান্য অঞ্চলে জমির মূল্য গত এক দশকে ২ থেকে ৩ গুণ বেড়েছে। বেড়েছে অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর দাম। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এর টেকসই নগর ও কমিউনিটি উন্নয়নে নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসন আবশ্যক। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণে এবং আবাসন খাতের বিকাশে একটি জাতীয় ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

ডিসিসিআই নেতারা বলেন, ক্ষমতা এবং উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণে শুধু কাগজে নয়, বরং সুনির্দিষ্ট নীতি ও দৃশ্যমান উদ্যোগ প্রয়োজন। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ এবং দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ আরও কার্যকর করা সম্ভব। বিকেন্দ্রীকরণ সফল করতে প্রশাসনিক সামর্থ্য ও দক্ষতা বাড়ানো এবং জেলাগুলোতে আধুনিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকারের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা বিকেন্দ্রীকরণকে ত্বরান্বিত করবে।

সর্বশেষ খবর