সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ভয়ের কথা বলার পরও জবানবন্দি রেকর্ড কেন ব্যাখ্যা চায় হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসামির দুই হাত বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানোর প্রমাণ তার দুই হাতের কবজির নিচের কালশিরা দাগ থেকে প্রমাণিত হয়। আসামি রিমান্ডের ভয়ে এই জবানবন্দি দিয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। চাঁদপুরের মতলবের একটি হত্যা মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এক আসামির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব লেখা রয়েছে। এর পরও আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কেন ও কীভাবে রেকর্ড করা হলো, এর লিখিত ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট বিচারকের কাছে জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। এক মাসের মধ্যে চাঁদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূরে আলমকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়েছে। এক স্মারকে ম্যাজিস্ট্রেট উল্লেখ করেছেন, ‘‘আসামি একপর্যায়ে বলেছে, ‘পুলিশ বলেছে, দোষ স্বীকার না করলে আবার রিমান্ডে নিয়ে পেটাবে। যতবার দোষ স্বীকার করব না, ততবার রিমান্ডে নিয়ে মারবে। এ জন্য আমি (আসামি) দোষ স্বীকার করেছি’।’’ আসামির দোষ স্বীকার স্বেচ্ছাপ্রণোদিত নয় বলে ওই স্মারকে উল্লেখ করেন ম্যাজিস্ট্রেট। ওই হত্যা মামলায় আসামি মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে খলুর জামিন আবেদনের শুনানিতে বিষয়টি আদালতের নজরে আনে আসামিপক্ষ।

 শুনানি নিয়ে আদালত রুল দিয়ে মো. ফরহাদকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে। নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে হাই কোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করে ফরহাদ হোসেন, যার ওপর গতকাল শুনানি হয়। আদালতে ফরহাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রিমি নাহরীন।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। ফরহাদ হোসেনের বয়স নিরূপণ করতে হাই কোর্ট বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান তিনি। মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কলামে ফরহাদের বয়স ১৬ বছর লেখা আছে। ফরহাদ বলেছে, সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। ওই মামলার অভিযোগপত্রে ফরহাদের বয়স ১৯ বছর লেখা রয়েছে। আইনের দৃষ্টিতে ওই জবানবন্দি কোনো জবানবন্দি নয়; কেননা নির্যাতনের কথা বলা আছে।’

নথিপত্র থেকে জানা যায়, চাঁদপুরের দক্ষিণ মতলবের কাজিয়ারা গ্রামের মো. সোহেল রানাকে (১৭) হত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট মতলব দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের ভাই। সোহেল মাদ্রাসাশিক্ষার্থী ছিল। এ মামলায় ফরহাদসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তিনজনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর ফরহাদের জবানবন্দি রেকর্ড (লিপিবদ্ধ) করেন চাঁদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এ মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি এখন অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির জন্য রয়েছে।

আইনজীবী রিমি নাহরীন বলেন, রিমান্ডের ভয় ও নির্যাতনের কথা উল্লেখের পরও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরহাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। এ ক্ষেত্রে নির্যাতনের বিষয়ে তদন্ত না করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া ফরহাদের বয়স স্বীকারোক্তিতে ১৬ বছর ও অভিযোগপত্রে ১৯ বছর উল্লেখ করা হয়েছে, এসব অসংগতি আদালতের নজরে আনা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর