সোমবার, ৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্যান্সার আক্রান্ত করোনা রোগীর চিকিৎসা বন্ধ জীবন নিয়ে শঙ্কা

শামীম আহমেদ

ঢাকা শিশু হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ২১ দিন ধরে মৃত্যুশয্যায় ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সাড়ে তিন বছরের শিশু শিমুল আরাফাত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তিন সপ্তাহেও খুদে দেহটি ছেড়ে যায়নি করোনাভাইরাস। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ক্যান্সারের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছে শিশুটির। এদিকে দিনের পর দিন চিকিৎসার ব্যয় সামলাতে গিয়ে নিঃস্ব হতদরিদ্র পরিবারটি। শুধু শিমুল আরাফাত নয়, করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় চিকিৎসা বন্ধ হয়ে ক্রমে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে আরও অনেক ক্যান্সার রোগী। সেই সঙ্গে ব্যয়বহুল চিকিৎসার মেয়াদ বাড়তে থাকায় নিঃস্ব হচ্ছে পরিবারগুলো। শিমুল আরাফাতের মতো ওই হাসপাতালেরই ক্যান্সার ওয়ার্ড থেকে করোনা ওয়ার্ডে জায়গা হয়েছে সাড়ে সাত বছরের শিশু আতিকুল ইসলামের। গত ১১ এপ্রিল তাকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলেও এখনো করোনামুক্ত হয়নি এই শিশুটি। ফলে বন্ধ আছে ক্যান্সার চিকিৎসা।

চিকিৎসকরা বলছেন, ক্যান্সার চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। এ সময় তাদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যেমন বেশি থাকে, তেমনি অন্য রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে তা সারতেও সময় লাগে। করোনায় ক্যান্সার রোগীরা খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ সামলাতে সহায়-সম্বল বিক্রি করে এখন প্রায় নিঃস্ব শিমুল আরাফাতের পরিবার। শিশুটির মা হারিজা বেগম বলেন, তার স্বামী ৭ হাজার টাকা বেতনে একটি প্রতিষ্ঠানে ঝাড়ুদারের কাজ করেন। ছেলেকে নিয়ে আট মাস ধরে এই হাসপাতালে আছেন। প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ৪ বছর চিকিৎসা করাতে হবে। ৪০-৫০ লাখ টাকা লাগবে। এতদিন ক্যান্সার ওয়ার্ডে ছিল। হঠাৎ করোনা শনাক্ত হওয়ায় ২১ দিন ধরে করোনা ওয়ার্ডে আছে। ক্যান্সারের চিকিৎসা বন্ধ। টাকা-পয়সা সব শেষ। ছেলেটিকে বাঁচাতে পারব কিনা জানি না। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পচন ধরেছে। একটা মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। আর বোধ হয় পড়াতে পারব না। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন  ছেলের চিকিৎসায় কুমিল্লা থেকে আট মাস আগে ঢাকায় আসা এই নারী।

এদিকে আতিকুল ইসলামের মা তাসলিমা বলেন, তাদের বাড়ি সাতক্ষীরা। ৪ মাস আগে ক্যান্সার ধরা পড়লে ঢাকা শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ডে ছেলেকে ভর্তি করান। প্রথম ধাপে ৬ মাসের চিকিৎসা। তিনটি কেমো দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়ায় ১১ এপ্রিল থেকে করোনা ওয়ার্ডে আছে। গত বৃহস্পতিবার করোনা টেস্ট করেও পজিটিভ এসেছে। এখন ক্যান্সারের চিকিৎসা বন্ধ। দিন দিন ছেলের শরীর খারাপ হচ্ছে। বারবার জ্বর আসছে। ইনফেকশন বাড়ছে। চিকিৎসক বলেছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় করোনা ভালো হচ্ছে না। আর করোনা না গেলে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। ৪ মাস ধরে আরেক ছেলে তরিকুলকে সঙ্গে নিয়ে এই হাসপাতালে পড়ে আছি।

সর্বশেষ খবর