সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
গাজীপুরে দুই পোশাক কারখানা লে-অফ ঘোষণা

শ্রমিক বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপ

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে দুটি পোশাক কারখানা লে-অফ ঘোষণার প্রতিবাদে এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ওই দুই কারখানার শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। গতকাল গাজীপুর মহানগরীর বাসন সড়ক ও ভোগড়া চৌধুরীবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।  পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া চৌধুরীবাড়ি এলাকার ইন্টারলিংক অ্যাপারেলস লিমিটেড এবং বাসন সড়ক এলাকার ইন্টারলিংক ড্রেসেস লিমিটেড কারখানা দুটির শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো শনিবার রাত পর্যন্ত কাজ করে বাড়ি ফিরে যান। পৃথক মালিকানাধীন এ দুই কারখানায় যথাক্রমে প্রায় ৮০০ ও ১২০০ শ্রমিক রয়েছেন। ইন্টারলিংক অ্যাপারেলসের শ্রমিকদের গত সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ভাতা রবিবার (গতকাল) এবং ইন্টারলিংক ড্রেসেস কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা ১২ অক্টোবর পরিশোধের কথা ছিল। শ্রমিকরা শনিবার রাতে কাজ শেষে কারখানা ত্যাগ করার পর কর্তৃপক্ষ পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে ১০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত কারখানা দুটি লে-অফ ঘোষণা করে গেটে নোটিস টানিয়ে দেয়। নোটিসে লে-অফকালীন যেসব শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ এক বছরের অধিক হয়েছে তাদের শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। পরদিন সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে ওই নোটিস দেখতে পেলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় কারখানার শ্রমিকরা লে-অফ ঘোষণার প্রতিবাদে তাদের কারখানার গেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।

তারা বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা কারখানার পাশর্^বর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর পৃথকভাবে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ইন্টারলিংক অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা পাশর্^বর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চৌধুরীবাড়ি এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। প্রায় একই সময়ে ইন্টারলিংক ড্রেসেস কারখানার শ্রমিকরা বাসন সড়ক এলাকায় একই মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়ে অবরোধকারীদের সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে শিল্প পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এদিকে আলোচনার আশ্বাস পেয়ে প্রায় একই সময়ে ইন্টারলিংক ড্রেসেস কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিকালে পুলিশের মধ্যস্থতায় ইন্টারলিংক অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।

ইন্টারলিংক অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রশিদ এ ব্যাপারে জানান, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এ কারখানার ব্যবসায়িক অবস্থা ক্রমাগত মন্দা হওয়ায় কর্তৃপক্ষ চরমভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত। এমতাবস্থায় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন মোতাবেক ১০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত কারখানাটির সব সেকশনের কাজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। লে-অফ সময়ে যেসব শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার চাকরির  মেয়াদ এক বছরের অধিক হয়েছে তাদের শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।

সর্বশেষ খবর