২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৭:১০
ধারাবাহিক উপন্যাস

সুলতান সুলেমান (পর্ব-১)

কারও কাছে উসমানিয়া সাম্রাজ্য আবার কারও কাছে অটোমান সাম্রাজ্য। পৃথিবীজুড়ে তুরস্কের এই সাম্রাজ্যের রাজত্ব ছিল প্রায় সাতশ বছর। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মুসলিম সাম্রাজ্যও ছিল এটি। আর সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ ছিল সুলতান সুলেমানের নেতৃত্বে ষোড়শ থেকে সপ্তাদশ শতাব্দী। ইউরোপীয়দের কাছে ‘সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’ খ্যাত সুলতান সুলেমান প্রকৃত অর্থেই পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা একজন শাসক ছিলেন। বাবা প্রথম সেলিমের উত্তরাধিকারী হিসেবে সিংহাসনে আরোহণের আগে মানিসাসহ তিনি রাজ্যের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপরই অটোমান সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত ক্ষমতা তোপকাপি প্রাসাদের হাতছানি। ক্ষমতার টানাপড়েনে ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা, ভাই-সন্তান হত্যা, দাসপ্রথা আর হারেমের নানা পরিক্রমা ছাপিয়ে এগিয়ে গেছে সুলেমানের শাসনকাল। তার শাসনামলেই হারেমের দাসী রোলাক্সেনা হয়ে ওঠেন সুলতানের প্রিয় হুররেম। বিশ্বজুড়ে এ এক বিরল কাহিনী। এই কাহিনী নিয়ে নির্মিত তুরস্কের জনপ্রিয় সিরিজ ‘মুহতেশেম ইউযিয়েল’ বাংলাতেও প্রচারিত হচ্ছে একটি টিভিতে। বিতর্ক থাকলেও এর জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী অতুলনীয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক পাঠক সুলতান সুলেমান সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। সে কারণেই পাঠকদের জন্য ইতিহাসের আশ্রয়ে ধারাবাহিকভাবে ‘সুলতান সুলেমান’ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টিভি সিরিজে যেমন অনেক কিছুই কাল্পনিক রাখা হয়েছে, তেমনি এখানেও কল্পনার আশ্রয়ে উপাদান থাকবে। তাই দুটির মিল খুঁজতে না যাওয়াই উত্তম। তবে যেহেতু মূল আশ্রয় ইতিহাস, তাই এর তেমন কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। সুলেমান সুলতান হয়ে ওঠার আগে মানিসার প্রশাসক ছিলেন। সেই আমল থেকে আমাদের গল্পের শুরু। এটি প্রতি শনিবার ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হবে।

রণক ইকরাম

সুলতান সুলেমান (পর্ব-১)

‘দ্রিম... দ্রিম... দ্রিম।’

মধ্যরাতে যুবরাজের কক্ষ থেকে এমন শব্দ আসার কথা নয়। পরপর দুবার শব্দটা কানে আসতেই চমকে ওঠে হারেমের প্রধান রক্ষক মুহিব আগা। চমকে ওঠার মতোই ব্যাপার। বেশিক্ষণ হয়নি সেখান থেকে এসেছে সে। যুবরাজের কক্ষে একজন কঙ্কুবাইনকে রেখে এসেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে সকাল পর্যন্ত কেটে যাওয়ার কথা নিমিষেই। কিন্তু এর মধ্যেই কিসের সংকেত দিচ্ছেন যুবরাজ?

হন্তদন্ত হয়ে যুবরাজের কক্ষে ছুটলেন মুহিব। চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। কে জানে আবার কোন বিপদ অপেক্ষা করছে?

ঘরের ভিতর ঢুকতেই মেয়েটাকে চোখে পড়ল। লাল পোশাকে কঙ্কুবাইন মেয়েটাকে দারুণ দেখাচ্ছে। বুকের দুই পাশ ঘেঁষে দুই ফাঁলি কাপড় উঠে গেছে ঘাড় অবধি। স্বল্প আবরণ ভেদ করে আর আবরণের ফাঁক গলিয়ে দুরন্ত যৌবন প্রকট হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে সাজ ছাড়াই ঝলকানি দেওয়া সৌন্দর্য যেন! হাল্কা সাজগোজে সে ঝলকানি আরও বেশি ফুটে উঠেছে। গলার ভিতর ঝুলানো চেইনের লকেটটা যেন বাড়িয়ে দিয়েছে মোহনীয়তা। একপলক সেদিকে তাকিয়েই যুবরাজকে কুর্নিশ করল মুহিব আগা।

‘এই মেয়েটি আজ থেকে মুক্ত। ইব্রাহিমকে ডেকে মেয়েটিকে কোনো একটা কাজ দিয়ে দাও।’

বলেই সিনা টান করে বিছানার পাশের চেয়ারের দিকে পা বাড়ালেন যুবরাজ। মুহিব কেবল মাথা দুলিয়ে যুবরাজের আদেশ মেনে নিলেন। ইশারায় মেয়েটিকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বললেন। মেয়েটি একবার করুণ চোখে যুবরাজের দিকে তাকাল। যুবরাজ ইশারায় তাকে চলে যেতে বলল।

মুহিব আগা ঠিক বুঝতে পারছে না যুবরাজ রেগে আছেন, নাকি স্বাভাবিকভাবেই মেয়েটিকে বেরিয়ে যেতে বললেন। যুবরাজের মতি বোঝা ভীষণ কঠিন। কখনো মনে হয় তার চেয়ে ভালো মানুষ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। আবার কখনো মনে হয় তিনি বুঝি মানুষই নন! ভীষণ রাগী, রক্তপিপাসু একজন! ততক্ষণে বিষয়টি টের পেয়ে গেছেন যুবরাজের একান্ত সহচর ও বন্ধু পারগালি ইব্রাহিম পাশাও। কক্ষের বাইরে মুহিবকে দেখেই ইব্রাহিমের প্রশ্ন—

‘কোনো সমস্যা?’

‘যুবরাজ একে মুক্ত করে দিয়েছেন আর বলেছেন, আপনি যেন একে অন্য কোনো কাজে লাগিয়ে দেন।’

‘আর কিছু বলেছেন?’

‘না।’

‘ঠিক আছে। তুমি ওকে নিয়ে যাও।’

পাশেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা কঙ্কুবাইনের দিকে তাকিয়ে বললেন ইব্রাহিম পাশা। মেয়েটাকে তিনিই বাছাই করে দিয়েছিলেন। যেমন উঁচা-লম্বা, তেমনই মায়াবী চেহারা। যুবরাজের অপছন্দ হওয়ার কথা না। এরপরও কী হলো কে জানে। ইব্রাহিম পাশাকে খানিকটা চিন্তিত মনে হলো। তবে আর কোনো কথা বাড়ালেন না তিনি। ওর সঙ্গে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। আসল তথ্য জানাতে পারবেন কেবল স্বয়ং যুবরাজ। এর বাইরে আর কারও পক্ষেই কিছু বলা সম্ভব না। সে কারণেই ছোট্ট পায়ে যুবরাজের কক্ষের দিকে এগুলেন ইব্রাহিম।

যুবরাজ তখন নিবিষ্ট মনে কী যেন লিখছেন। ইব্রাহিম গুটি গুটি পায়ে যুবরাজের কক্ষে ঢুকে কুর্নিশ করলেন। কয়েক সেকেন্ড পর ইব্রাহিমের দিকে মুখ তুলে তাকালেন যুবরাজ। ইব্রাহিম তখনো নিশ্চুপ। প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে যুবরাজের দিকে একবার তাকালেন কেবল। এটুকুই যথেষ্ট মনে হলো। ইব্রাহিমের প্রশ্নটা বুঝতে পারলেন যুবরাজ। মুখ ঘুরিয়ে বললেন।

‘মেয়েটাকে মুক্তি দিয়ে দিলাম। কোথাও একটা কাজে লাগিয়ে দাও। আর তুমি একটু খোঁজখবর রেখ।’

‘হুজুর, কোনো বেয়াদবি করেছে?’

‘না। সেরকম কিছু না। এমনি।’

‘আর কাউকে পাঠাব। আরও ক’জন নতুন মেয়ে আছে। ক্রিমিয়া থেকে আনা। আর আপনি চাইলে স্যাক্সোনাকেও পাঠাতে পারি।’

যুবরাজের প্রিয় সঙ্গীদের একজন স্যাক্সোনা। এই হারেমে যে ক’জন মেয়ে আছে এর মধ্যে স্যাক্সোনাকেই যুবরাজের সবচেয়ে প্রিয় মনে করা হয়। সেই প্রিয় সঙ্গীর কথা বলে যুবরাজকে প্রলুব্ধ করতে চাইলেন ইব্রাহিম পাশা। কিন্তু কাজ হলো বলে মনে হলো না। নিরাসক্তের মতো চোখ তুললেন যুবরাজ।

‘না। আজ আর কাউকে পাঠাতে হবে না। তুমি যাও।’

আর কথা বাড়ালেন না পারগালি ইব্রাহিম পাশা। যুবরাজ নিজ থেকে না বললে এসব বিষয় নিয়ে সাধারণত কথা বাড়ায় না কেউই। প্রিয় যুবরাজ আর বন্ধুকে তার চেয়ে বেশি কেউ চেনে না। খুব ভাবের মানুষ তিনি। মাঝে মাঝে ইব্রাহিমের মনে হয় যুবরাজ বোধহয় শাসক না হয়ে শিল্পী কিংবা কবি হলেই ভালো করতেন। কখনো তিনি নিবিষ্ট মনে কবিতা লেখেন আবার কখনো নিজেই বসে বসে অলঙ্কার তৈরি করেন! যদি একবার কঠিন দৃঢ়তায় রাজ্য শাসনের সিদ্ধান্ত নেন তো আরেকবার শিশুসুলভ ঠাট্টায় মেতে ওঠেন। বড় অদ্ভুত মানুষ তিনি। তার আচরণ দেখে মনেই হয় না তিনিই অটোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে যোগ্য উত্তরাধিকারী, সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সুলতান! তবে তার কঠিন ব্যক্তিত্ব আর দৃঢ়চেতা মানসিকতা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। টগবগ করতে থাকা আত্মবিশ্বাস আর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে অদ্ভুত ক্ষমতা তার মধ্যে আছে, সেটিই হয়তো তাকে টেনে নিয়ে যাবে বহুদূর।

ঠিক তোপকাপি প্রাসাদের হারেমের মতো অতটা জাঁকজমক আর ঝলমলে না হলেও মানিসার এই ছোট্ট হারেমটার অনেক কিছুতেই রয়েছে কনস্টান্টিনোপলের ছাপ। তোপকাপি প্রাসাদে অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতানের বসবাস। রাজ্যের কেন্দ্রে সুলতানের জন্য আয়োজন রাজকীয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কম যান না মানিসার প্রশাসক সুলেমানও। অতটা রাজকীয় না হলেও এখানেও কোনো কিছুর কমতি নেই।

দাস হিসেবে কিনে আনা মেয়েগুলো যুবরাজের হারেমে বেশ আছে। অটোমান সুলতানদের তোপকাপি প্রাসাদের হারেমের মতো এখানকার যুবরাজের হারেমেও পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে ব্যতিক্রম কেবল ইব্রাহিম পাশা। তিনি কেবল যুবরাজের সহচরই নন, কাছের বন্ধুও বটে। সে কারণে যুবরাজের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়সহ হারেমের কঙ্কুবাইনদের বিষয়েও তার ধারণা রাখতে হয়। তবে বাইরের মানুষ হারেম সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। হারেম নিয়ে তাদের ধারণার পুরোটাই কল্পনাপ্রসূত। কিন্তু ইব্রাহিম পাশা ভালো করেই জানেন এখানে কেবল যুবরাজের মনোরঞ্জনের জন্য আনা মেয়েরাই থাকে না, বরং পরিবারের সব নারী সদস্যের থাকার স্থানও এটাই। এই হারেমে যুবরাজের স্ত্রীসহ আরও অনেক স্ত্রীলোকের বসবাস। তারা সবাই যুবরাজ সুলেমান যিনি বর্তমানে মানিসার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন, তার সেবা করেন। এদের মধ্যেই কেউ কেউ যুবরাজের শয্যাসঙ্গী হয়। এদেরই কঙ্কুবাইন বলে। কঙ্কুবাইনরা দীর্ঘদিন ধরেই অটোমান সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে উঠেছে। তবে স্ত্রী ব্যতিরেকে যারা যুবরাজের শয্যাসঙ্গী হয়, সেই কঙ্কুবাইনদের থাকার জায়গা আলাদা। শুধু নারীরাই নয়, এমনকি ছেলে সন্তানরাও আট বছর বয়স পর্যন্ত এখানে থাকে। আর হারেমের রক্ষী হিসেবে থাকেন কতগুলো খোজা। এই খোজারা পুরুষ বটে, কিন্তু সাধারণ পুরুষ নয়।

 কারণ একজন সাধারণ পুরুষের যে মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকে সেই মৌলিক বৈশিষ্ট্যই তাদের শরীর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। বিশেষ শ্রেণির এই পুরুষদের নামই খোজা। এদের অধিকাংশ কিশোর কিংবা শিশু অবস্থায় এখানে আসে। এরপর এদের ক্যাস্টাশন করিয়ে খোজা বানিয়ে ফেলা হয়। ক্যাস্টাশন হচ্ছে অণ্ডকোষসহ শুক্রথলি কেটে ফেলে দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় এদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। শুক্রথলি কেটে ফেলার কারণে তাদের কোনো যৌন ক্ষমতাও থাকে না। অনুভূতি এবং আচরণও অনেক সময় নারীসুলভ হয়ে ওঠে। তাই হারেমের নারীদের পাহারা ও কায়িক শ্রমের কাজ করানোর জন্য তারাই উত্তম এবং নিরাপদ। একদিকে যেমন এরা শক্তসামর্থ্য হয়, অন্যদিকে তেমনি পুরুষসুলভ আচরণ না থাকায় হারেমের নারীরা এদের কাছ থেকে নিরাপদ থাকে। খোজাদের সংগ্রহ করা হয় ইস্তাম্বুলের ক্রীতদাসের বাজার থেকে। মূলত উত্তর আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপ থেকে তুলে আনা দাসদের সবচেয়ে বড় বাজার ইস্তাম্বুল। সেখান থেকেই এদের সংগ্রহ করা হয়। শিশু কিংবা কিশোর দাস ছাড়াও কখনো কখনো অনেককে খোজা বানিয়ে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা। হারেম, কঙ্কুবাইন কিংবা খোজা এসব কনস্টান্টিনোপলের তোপকাপি প্রাসাদের রীতি। এই রীতি অটোমান সাম্রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। বাদ পড়েনি তাই মানিসাও। কী করে বাদ পড়বে? এখানকার যিনি প্রশাসক, তিনিই সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অটোমান সুলতান। সুলতান প্রথম সেলিমের পর তার উত্তরাধিকার হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন সুলেমান। প্রজাদরদী, বিচক্ষণ, জ্ঞানী আর বীর হিসেবে যুবক বয়সেই তিনি কুড়িয়েছেন দারুণ সুনাম। প্রজাদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা যেমন অন্য যে কোনো প্রশাসকের তুলনায় অনেক বেশি, তেমনি প্রশাসক হিসেবে তার সাফল্যও কিন্তু দারুণ। ইব্রাহিমের বিশ্বাস সুলেমান একদিন ঠিক তোপকাপি প্রাসাদের কাণ্ডারি হবেন।

অনেক সময় নিজের কাছে নিজেকেই অচেনা লাগে সুলেমানের। বুঝতে পারেন না তার মন যে আসলে কী চায়! মহামতি আলেকজান্ডারের মতো দিগ্বিজয়ের স্বপ্নটা মন থেকে মুছে না। আবার কখনো কখনো জেগে ওঠে ভিতরের বিষণ্ন কবি। তখন মনে হয় সব ছেড়ে ছুড়ে যদি কেবল লিখে যেতে পারতেন!

মানচিত্রের এপার ওপারে অটোমান সাম্রাজ্যের ছবি ভুলে তখন মনের ভিতর চাঁদ-তারাদের হাট বসে।

কঙ্কুবাইনের পেলব ঠোঁট যৌনতা ছাপিয়ে প্রেম নামায়। রাজ্য-প্রজা ছাপিয়ে আপন হয় আকাশ-বাতাস আর মৃদু হাওয়া।

তলোয়ারের ধারেই কাটে রক্তের পিয়াস, জেগে ওঠে সাধারণ একজন কবি!

বেশ কিছুক্ষণ লেখার চেষ্টা করলেন সুলেমান। কিন্তু বারবারই লাইন মেলাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যেন যেটা বলতে চাচ্ছেন সেটা কিছুতেই ব্যক্ত হচ্ছে না। ভীষণ অস্থির লাগছে। কঙ্কুবাইন মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেল। কী যেন নাম মেয়েটার? মনে পড়েছে। হ্যারানসিনা!

হ্যারানসিনা! নামটাও কেমন যেন মেয়েটার মতোই অদ্ভুত। হারেমখানার কঙ্কুবাইন হয়ে এসেছিল সুলেমানের মনোরঞ্জনের জন্য। অথচ সুলেমান  তাকে স্পর্শ পর্যন্ত করল না! কী করে করবে? মেয়েটার টানা চোখের প্রান্ত গলে অশ্রু ঝড়ছিল। নাম জিজ্ঞেস করার পর কেমন যেন তোতলাচ্ছিল। সে কী ভয় পাচ্ছিল? কিন্তু সুলেমান সব সময় সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে পছন্দ করে। এমনকি সে যদি হারেমের দাসী হয়, এরপরও। তাহলে মেয়েটার অমন ভড়কে যাওয়ার কারণটা কী? সোনালি চুল আর লাল পোশাকের তীব্রতা ছাপিয়ে তখন মেয়েটার অশ্রুসজল চাহনি সুলেমানকে ভিন্নভাবে স্পর্শ করে গিয়েছিল। যে স্পর্শ তুড়ি মেরে যৌনতাকে উড়িয়ে দিয়েছে। এমন খুব কম সময়েই হয়েছে। সুলেমান ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে চান না কখনোই। মনের ভিতরের পশুটাকে অনেক সময়ই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। আজ যেমন রাখলেন। বিক্ষিপ্ত মনের ভাবনা অক্ষরে সাজানোর জন্যই বসেছেন টেবিলে।

কিন্তু কোথায় কী? শব্দের সংকটে মনের বিক্ষিপ্ততাই বেড়েছে কেবল। কয়েক লাইন লিখেছেন বটে। কিন্তু কোনোটাই নিজের মনোপুত হচ্ছে না। একটু থামলেন যুবরাজ। পেয়ালা থেকে খানিক পানীয় মুখে তুলে নিলেন। এরপর পেছনে হাত দিয়ে ঘরের ভিতরই পায়চারি করলেন বেশ কিছুক্ষণ। নাহ! মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।

এরপর আরও কতক্ষণ চেয়ারে বসে এটা ওটা ভাবলেন সুলেমান। ভাবতে ভাবতেই চোখের সামনে মাহিদেভরানের মুখটা ভেসে ওঠলো। মনে পড়ে গেল প্রিয়তমা স্ত্রী মাহিদেভরানের কথা।

সে কী ঘুমিয়ে পড়েছে?

[চলবে...আগামী শনিবার পরবর্তী পর্ব]

 

সর্বশেষ খবর