ভারতের নয় দফা লোকসভা নির্বাচনের অষ্টম পর্বের ভোট হতে চলেছে আগামীকাল বুধবার। এ দফায় ভোট হবে দেশের ৭ রাজ্যের ৬৪টি আসনে। এর মধ্যে আছে অন্ধ্রপ্রদেশের ২৫টি, উত্তরপ্রদেশে ১৫টি, বিহারে ৭টি, পশ্চিমবঙ্গের ৬টি, উত্তরাখণ্ডের ৫টি, হিমাচল প্রদেশের ৪টি, কাশ্মীরের ২টি আসন। ভোট শুরু হবে সকাল ৭টায়, চলবে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত। ভোট সুষ্ঠু করতে প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেশজুড়ে এ দফায় যাদের ভাগ্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন: কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী, বিজেপির প্রার্থী বরুণ গান্ধী, লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান রামবিলাস পাসোয়ান, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেত্রী রাবরি দেবী, বিজেপির তারকা প্রার্থী স্মৃতি ইরানি, তৃণমূল প্রার্থী শ্রীমতি দেববর্মা (মুনমুন সেন), বিজেপি প্রার্থী সংগীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়।
ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর এবং আসানসোল-পশ্চিমবঙ্গের এই ছয়টি লোকসভা কেন্দ্র থেকে ৭২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১১ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। ছয় কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছেন ৮৮,৭৭,৭০১ জন। এরমধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ৪২,৬৮,১৯১। ২০০৯ সালের নির্বাচনে এই ছয়টি আসনই বামফ্রন্ট দখল করেছিল। কিন্তু এবার চিত্রটা একটু ভিন্ন। পরিবর্তনের হাওয়ায় বামদের সেই একচ্ছত্র আধিপত্য আজ আর নেই। তারওপর দেশজুড়ে মোদির হাওয়া এসে পড়েছে এ রাজ্যেও। সবমিলিয়ে টলমল বামরা আজ নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতেই তৎপর। বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে টানা নয় বারের সংসদ সদস্য সিপিআইএম প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়াও এবার নিজের জয় নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। ২০০৪ সালে এই কেন্দ্র থেকে ২ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। ২০০৯ সালে জয়ের সেই মার্জিন এসে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৭ হাজারে। এবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের প্রার্থী এক সময়ের বাংলা চলচ্চিত্রে ঝড় তোলা বাঙালির হার্টথ্রব মুনমুন সেন এবং বিজেপির সুভাষ সরকার। বাসুদেব বাবু এবারও জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত। বললেন তারকারদের সিনেমার পর্দায় দেখতে ভাল লাগে, বাস্তবের মাটিতে নয়।
কঠিন লড়াই হবে আসানসোল কেন্দ্রেও। এবার এখানে চতুর্মুখী লড়াইয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে আছে বিজেপির তারকা প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি নিজে এসে বাবুলের হয়ে প্রচার করে গেছেন। মেদিনীপুর কেন্দ্রে থেকে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ও বিরোধীদের যথেষ্ট বেগ দিতে পারে।
একসময়ের মাওবাদীদের স্বর্গরাজ্য বলে খ্যাত ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, ও বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন অনেকটাই শান্ত। রাজ্যে পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে গিয়েছে বন্দুকের গুলির শব্দ কিংবা ভারী বুটের আওয়াজ। তবু যেকোনো নাশকতা এড়াতে জঙ্গলমহলের এই এলাকাতেও এবার কড়া নিরাপত্তা রাখা হয়েছে। আধা সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীকেও।
বিহারে ৭টি আসনে মোট ১১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লক্ষ। এ রাজ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আসন হল হাজিপুর এবং সারণ। হাজিপুরে ভাগ্য পরীক্ষায় নামছেন লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান রামবিলাস পাসোয়ান অন্যদিকে সারণ কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দল প্রধান লালুপ্রসাদের স্ত্রী রাবড়ি দেবী।
কড়া নিরপত্তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ১৫ টি আসনেও এপর্বে ভোট হবে। কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী ছাড়াও এপর্বে ভাগ্য নির্ধারণ হবে বিজেপির বরুণ গান্ধী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেণি প্রসাদ ভার্মা, কংগ্রেসের তারকা প্রার্থী মহম্মদ কাইফ, আম আদমি পার্টির কুমার বিশ্বাস।
গত পর্বে অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে ভোট হওয়ার পর এবারের পালা সীমান্ধ্রের। এ পর্বে ভোট হবে ২৫টি কেন্দ্রে। ৩৩৩ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটার।