শিরোনাম
- ১০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা কাঠের সেতু এখন অকেজো
- 'অশ্লীল' তকমা দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয় মাধুরীর গান
- গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা স্ত্রীর, বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ স্বামী
- টানা জয়ের বিশ্বরেকর্ড এককভাবে মরক্কোর
- ট্রাকচাপায় জাবি ছাত্রী নিহত
- ৫ দফা দাবিতে গোপালগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের মানববন্ধন
- পঞ্চগড়ে ‘ঘরে ঘরে জনে জনে’ কর্মসূচিতে মিলছে সাড়া
- ১৬ লাশের মধ্যে সাত লাশ হস্তান্তর হতে পারে
- চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে আটক ৬১ জেলে
- জুলাই-আগস্টের ৭ মামলায় সালমান-আনিসুলসহ ৪৫ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির
- নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমাদের সম্মান বাড়বে: চবি উপাচার্য
- খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে স্থায়ীভাবে অপসারণ
- সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন
- নারায়ণগঞ্জে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিত
- ডিপ ফ্রিজ থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামী গ্রেফতার
- মিরপুরের অগ্নিকাণ্ডে এখনো নিখোঁজ ১৩ জন
- ৩৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান, চাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু
- ঝালকাঠিতে জলাতঙ্কে যুবকের মৃত্যু
- কাল এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ, জানবেন যেভাবে
- রাজধানী ঢাকায় আজ কোথায় কোন কর্মসূচি?
হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন এসব
মুন্নী সাহা
অনলাইন ভার্সন

একেকটা যুদ্ধাপরাধীর রায় হয়, আর তার আগে পরে, আমাদের নিউজ রুমগুলোতে অজ্ঞাত সোর্স থেকে প্রেসরিলিজ... অমুক দিন হরতাল, তমুক দিন অবরোধ...। আমরা মনের আনন্দে ব্রেকিং নিউজ দিয়ে জানান দিই। সারা দিনরাত আপডেট, নিউজ স্ক্রল কত কায়দায়। তারপর হরতাল হয়ে যায়। এখনকার অবরোধের কথা বলছি না, বলছি ২-৩ মাস আগের অভিজ্ঞতা। সে সময় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে খালেদ (খালেদ মুহিউদ্দিন) ডাকল কয়েকজনকে, যারা নিউজ রুমে সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নেন বা নিতে হয়। যাদের হাজির করা হয়েছিল সরাসরি বা কানেক্টিভিটিতে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই মালিক সম্পাদক। সংবাদকর্মী আমি, উপস্থাপক খালেদসহ দুয়েকজন। অজ্ঞাত স্থান থেকে অচেনা স্বাক্ষরে পাঠানো হরতালের খবর কেন প্রচার করব, এই প্রশ্নে ডিবেট। আমি প্রচার না করার পক্ষে দায়িত্বশীলতার কথা তুলে কোণঠাসা মাইনরিটি হলাম। খালেদ, উপস্থাপকের চেয়ারে বসে আমাকে হাল্কা সমর্থন দিলেও সাংবাদিকতার বইয়ের সংজ্ঞা, নির্লিপ্ততার আন্তর্জাতিক রেফারেন্স... ইত্যাদিতে আমাকে একা ফাইটার বানিয়ে ভালো উপস্থাপকের প্রশংসাটি আবারও পকেটে নিল। সেই আলোচনায় পক্ষ-বিপক্ষ ছিল ১ঃ৭। হারাধনের একটি মেয়ে, হারু পার্টির আমি, আমার সাবেক বস মনজুরুল আহসান বুলবুলকে প্রশ্ন করেছিলাম... আচ্ছা, আমরা জামায়াতের ওয়েবসাইট থেকে হরতাল ডাকার খবর ব্রেকিং দিই, কোনো নেতাকে ক্যামেরার সামনে বলতে দেখি না, স্বাক্ষর কার থাকে, তাও চিনি না, যদি এমন হয়, জামায়াতের সত্যি কেউ কোনো একদিন এসব ডিজওন করে? তখন কী হবে? আমাদের দায়িত্বশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না? আর ক্ষয়ক্ষতি, মানুষ পোড়ানো, সাধারণ মানুষের কষ্ট এসব বললে তো নিরপেক্ষতা হারাব! বুলবুল ভাই আমাকে øেহ করেন, ক্যামেরার সামনেই একটু øেহমাখা ধমকে বলেছেন... এসব হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন কইরেন না তো মুন্নী! তারপর সাংবাদিকতার কিছু নীতিমালা, দেশ-বিদেশের উদাহরণ বলেছেন। এবারের অবরোধের কথা বলি।
৫ জানুয়ারি, খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনছিলাম এয়ারপোর্টে। আমার সাংবাদিকতার চোখ বলে, সেদিন তিনি মারমুখী ছিলেন না। কর্মসূচি কী দেবেন, তারও প্রস্তুতি ছিল না। সাংবাদিকরা কর্মসূচি কর্মসূচি বলে তার মুখে অবরোধ অব্যাহত শব্দ দুটি তুলে দিল। ভিতরে চলে গেলেন খালেদা জিয়া, সহজ ভঙ্গিতে। সাংবাদিকতায় বডি ল্যাংগুয়েজ বলেও একটা গ্রামার আছে। সায়মন ড্রিং শিখিয়েছিলেন, আমারই করা কিছু রিপোর্টের ক্লিপিং দেখিয়ে। সেই শিক্ষার অভিজ্ঞতা বলছিল, অবরোধ অব্যাহত- বাত্ কি বাত্। দুদিন পরেই সব ঠিকঠাক হবে। সুদিনের জন্য সেই বাত্ কি বাত্-এর দুদিন আর শেষ হচ্ছে না। এর মধ্যে ছেলে কোকোর লাশের পাশে, মা খালেদার কান্না ছাড়া বডি ল্যাংগুয়েজ পড়ার মতো আর কোনো অ্যাপিয়ারেন্স গত এক মাসে দেখেনি বাংলাদেশের মানুষ। শুধু অজ্ঞাত স্থান থেকে (আমরা নিউজ রুমে মজা করে বলি, তোড়াবোড়া পাহাড়, যেখান থেকে জঙ্গি নেতা লাদেন ভিডিও টেপ পাঠাত) প্রেস রিলিজ আসে, আর ব্রেকিংয়ে লাল হয়ে যায় টিভির পর্দা। একই সঙ্গে আগুনে পোড়া লাশে রক্তাক্ত হচ্ছে বাংলা। প্রতিদিন বাসে আগুন, ৭ জন, ৯ জন, ১৩ জন। ৫০০-১০০০ টাকার নগদ বিনিময়, আর ভবিষ্যতে ছাত্র সংগঠনের নেতা বা এমপি বানানোর প্রতিশ্র“তিতে মানুষ মারা চলছে। পুলিশ, র্যাব যাদের ধরছে তাদের এসব জবানবন্দিই আমরা ক্যামেরাবন্দী করে এসব জানাচ্ছি। আর নিরপেক্ষতার প্রতিযোগিতায় নুনের দাম খুনের দাম একাকার হয়ে যাচ্ছে রাতের টকশোগুলো। (আমিও এই সে াতের বাইরে নই, কারণ দেশের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফিল্টারে বিবেক পরিশুদ্ধ করে কথা বললে, জনপ্রিয়তা কমে। এই ভার্চুয়াল যুগে, কয়জন জাফর ইকবাল বা নির্মলেন্দু গুণ আছেন, যারা এই সোকলড পপুলারিটিকে থোড়াই কেয়ার করে সাদাসিধে কথাটি বলেন দেশের জন্য?)
খালেদা জিয়ার গত এক মাসের ক্যাজুয়াল অবরোধে ক্যাজুয়ালটি এখন পরিসংখ্যানের বিষয়। তোড়াবোড়া পাহাড় থেকে কখনো খবর আসে, অবরোধ চলবে, খালেদা জিয়া আরও কঠোর... আবার খবর আসে, খালেদা জিয়া বলেছেন এই দায় তার নয়! বাহ্ বেশ বেশ। প্রতিদিন আমরা নিরপেক্ষ পত্রিকার নিরপেক্ষতার চর্চা দেখছি, কাটতি বাড়ানোর টকশোতে শুনছি গণতন্ত্র আর জনগণের বরাতে নানান কথা। কিন্তু টেলিভিশনের বাইরে, খবরের কাগজের বাইরে থাকা মানুষগুলো তো অন্যরকম প্রশ্ন করে... যদি বলি বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসা ড্রাইভার টিটান ভাইয়ের কথা। তার প্রশ্ন... এই যে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলেন, আমার পোড়া মুখটা দেখলে কি ভোট দিতে ইচ্ছা করব? আইসিইউতে নুরু ভাই, হাত নেড়ে ইশারা করে কথা বলতে চাইলেন। পুরো শরীর ঝলসানো। বললেন, আমি বিএনপি করি, ভোটের জন্য এভাবে পুড়ল? আমি মরলে আমার ভোট যাইব, চৌদ্দগুষ্টির ভোট যাইব... যাইব না আপা?
আর হাসপাতালের বাইরে, গ্রামের চায়ের দোকানে ছোট ছোট চায়ের দোকানে জটলা। যুক্তিতক্কো নিজেদের মধ্যে। সাংবাদিক দেখে আরও লাউড হয় গলার স্বর... ১. বোজলাম গণতন্ত্র নাই ভোট হয় নাই... এক বছর সহ্য করছে ক্যা? ২. এখন এত মানুষ পোড়াইয়া দেশি, বিদেশি প্রভাবশালীদের চাপে যদি ক্ষমতা বদলায়, তাইলে আমগো কি? যারা প্রেটোল মারে হেগরেই তো মন্ত্রী বানাইব, এমপি বানাইব। বলেন তো আপা।
৩. আপনেরা বলেন দুই নেত্রী বইসা ঠিক করুক... ধরলাম ঠিক করল। একফির হাসিনা, আরেকফির খালেদা... হাসিনা এইবার খালেদারে বসাইয়া দিক, কিন্তু আবার হাসিনার জনসভায় বোমা রাখবো না তো? গ্রেনেড না কি মারলো মনে নাই? আর পাঁচ বছর শেষে আবার দুই বছর? আমাগো জাতির বিবেক কোন দ্যাশে আপা? ৪. গণতন্ত্রের কথা কন... সেখানে আমাগো দেশের বিরোধীদের বিচার করার কথা কি আছে? না কি হ্যাগোরে মাফ কইরা গণতন্ত্র!! রাস্তাঘাটের এসব আমজনতার প্রশ্ন অনেকক্ষণ সহ্য করা যায় না। কারণ এসব হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন। লেখক : বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ
এই বিভাগের আরও খবর