২৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ১০:১৪
কলকাতার চিঠি

ভোটব্যাংক রাজনীতি নেতাজিকে নিয়ে

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

ভোটব্যাংক রাজনীতি নেতাজিকে নিয়ে

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে ভোটব্যাংক রাজনীতি ক্রমেই প্রকাশ্যে এসে যাচ্ছে। এই রাজনীতি করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একদিকে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদি নেতাজি সম্পর্কে ১০০টি ফাইল প্রকাশ করে বলেছেন, প্রতি বছর ২৫টি করে ফাইল প্রকাশ করা হবে। আর কলকাতায় এলগিম রোডে নেতাজির বাসভবনে বসে নেতাজির পৌত্র হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসু বলেছেন, নেতাজির মৃত্যু ঘটেছে বিমান দুর্ঘটনায়। দার্জিলিংয়ে বসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, নেতাজি বেঁচে আছেন। নেতাজি মারা গেছেন এ কথা মানি না, মানব না। আগামী চার মাসের মধ্যে বিধানসভা ভোটের আগে নেতাজিকে নিয়ে যে ইস্যু তৈরি করেছেন তাতে রাজ্যবাসীর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। নেতাজির সম্পর্কিত আরেক পৌত্র আশিস রায় সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নেতাজি তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। শনিবার একই নেতাজি ভবনে বসে সুগত বসুর মা, প্রাক্তন তৃণমূল সংসদ সদস্য কৃষ্ণা বসু তা মানতে রাজি নন। মমতা-মোদির এই বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তার উদ্দেশ্য হলো নেতাজিকে ভাঙিয়ে ভোটের বাক্স ভরা। ৭৫ বছর আগে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সুভাষ বসু। জার্মানি থেকে ডুবোজাহাজে তিনি জাপানে আসেন। এই ডুবোজাহাজটি তাকে দিয়েছিলেন হিটলার। নািস হিটলারের সঙ্গে নেতাজির দহরম-মহরম কংগ্রেস ও বামপন্থিরা মেনে নিতে পারেনি। তাই মোদি-মমতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, জওহরলাল নেহেরু ষড়যন্ত্র করে নেতাজিকে রাশিয়ার কোনো জেলে আটকে রেখেছিলেন।

হার্ভার্ডের অধ্যাপক সুগত বসু এবং ইতিহাসবিদ রজতকান্তি রায় দুজনেই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নেতাজিকে নিয়ে ভোটের রাজনীতি করা জঘন্যতম অপরাধ। কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করেছিলেন নেতাজি। নেহেরুর আমলেই দুটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল— খোসলা কমিটি এবং শাহনওয়াজ কমিটি। এ দুটি রিপোর্টেও নেতাজির মৃত্যু বিমান দুর্ঘটনায় হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা নেতাজি। তাকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে তাকে নিয়ে ভোট রাজনীতি করা দেশের মানুষ মেনে নেবে, তাতে সন্দেহ আছে। ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বামপন্থিরা এর আগে বিজেপি সরকার এবং মমতা সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিল, ২৩ জানুয়ারি দেশপ্রেম দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। দুজনেই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, নেতাজির মৃত্যুর পর থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে নেতাজির স্ত্রী ও মেয়েকে ছয় হাজার টাকা করে পাঠানো হতো। কলকাতার নেতাজি ভবনে মা কৃষ্ণা বসু ও পুত্র সুগত বসুর পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে পরিবারের মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্যে এসে যায়। নেহেরুর সঙ্গে নেতাজির একটি জায়গায় বিরোধ ছিল। নেতাজি চেয়েছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অন্তত ১০ বছর একনায়কতন্ত্র থাকুক। নেহরু বলেছিলেন, ভারতের ৪০ কোটি মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। আমরা তাদের মতামত নিয়েই চলব, অর্থাৎ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। এরপর নেতাজি ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন এবং দেশ ছেড়ে চলে যান। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। বহু বইও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি যে বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন সে বিষয়ে সবাই একমত। একমত নন মমতা ব্যানার্জি। নরেন্দ্র মোদি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।

সুগত বসু বলেছেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে কেন কথা বলছেন না প্রধানমন্ত্রী। এদিকে মমতা যতই নেতাজিকে সামনে রেখে প্রচার করুক বর্তমান প্রজন্মকে তিনি অত সহজে বোকা বানাতে পারবেন বলে মনে হয় না। নেতাজিকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি না করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন কংগ্রেস ও বামপন্থিরা। 

 

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক


বিডি-প্রতিদিন/ ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা

সর্বশেষ খবর