২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১০:৪৪

বিএনপি ব্রিফিং ও ‘এলাহিভরসা’র দল!

কাজী সিরাজ

বিএনপি ব্রিফিং ও ‘এলাহিভরসা’র দল!

বিএনপি কাউন্সিলের ভেন্যু জটিলতার এখনো অবসান হয়নি। এটা ভালো কথা নয়। গত সপ্তাহের লেখায় আশা প্রকাশ করেছিলাম যে, সমস্যাটির সমাধান হয়ে যাবে। না হওয়াটা দুঃখজনকই শুধু নয়, উদ্বেগজনকও বটে। বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল তার জাতীয় কাউন্সিল করার জন্য প্রার্থিত ভেন্যুর সরকারি অনুমতি পাবে না কেন? এটা তো তাদের সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে সমাবেশের ও সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বিএনপি গঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ৩৮ বছর আগে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বরই ঘোষণা করা হয় যা দলটির ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। আমাদের সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদের নির্দেশের সঙ্গে বিএনপির ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত অঙ্গীকার মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। যদি তাই হতো স্বৈরাচার এরশাদের জাতীয় পার্টির শাসনামল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামল এবং মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের শাসনামলে সাংবিধানিকভাবে বৈধ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে কেউ টিকিয়ে রাখত না। একটি বৈধ রাজনৈতিক দলকে তার জাতীয় কাউন্সিলের জন্য প্রার্থিত ভৈন্যুর অনুমতি না দেওয়ার অর্থ তার কাউন্সিল অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা। এতে সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদ যে লঙ্ঘিত হচ্ছে সেদিকে সরকার কেন নজর দিচ্ছে না তা বুঝতে পারি না। সরকার হয়তো বলবে, অনুমতি তো সরকার দেয় না দেয় পুলিশ বা কোনো সংস্থা। কিন্তু মানুষ কি এত বোকা আছে এখন? পুলিশ বলুন আর কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বলুন, সবকিছুর নিয়ন্ত্রক তো সরকারই। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলটি তাদের নির্দিষ্ট সময়ে যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হোক, সরকার যদি তা আন্তরিকভাবে চায় তাহলে পুলিশ বিভাগ বা কোনো গোয়েন্দা সংস্থা অথবা ভেন্যুর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ তাতে আপত্তি করবে বলে মনে হয় না। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র রাজনৈতিক দলকে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয় না বলে যুক্তি দেখিয়ে আবেদন নাকচ করেছে বলে বিএনপি যে অভিযোগ করেছে তা মোটেই ধোপে টেকে না। ২৩ ফেব্রুয়ারিই আওয়ামী লীগ সেখানে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে এবং দলীয় সভানেত্রী হিসেবে তাতে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতীতের উদাহরণ দেওয়ার আর দরকার কি? সরকারের বৈরী আচরণের কারণে ভেন্যু না পাওয়ার ‘অজুহাতে’ বিএনপি যদি তাদের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিল করতে না পারে তাতে সরকার লাভবান হবে না। মানুষ মনে করবে, বিএনপির ভয়ে সরকার যেমন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সরকারি প্রভাবমুক্ত একটি ইনক্লুসিভ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায় না, একইভাবে পুনর্জাগরণের ভয়ে আতঙ্কে বিএনপিকে নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় কাউন্সিলও করতে দিতে চায় না। এতে এটাও মানুষের কাছে স্পষ্ট হবে যে, সরকারের বিএনপি-ভীতিটা কোথায়? একটা ধারণা তো ইতিমধ্যেই জন্ম নিয়েছে যে, সরকার দিন দিন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তাই তারা অতিরিক্ত পুলিশ ও প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়েছে। প্রধান ও প্রবল, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে দাবিয়ে রাখার জন্য পুলিশ, র্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথেচ্ছ ব্যবহার এবং তাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ মানুষ এখন আর অবিশ্বাস করছে না। অবশ্য সম্প্রতি পরিস্থিতিটা কিছুটা সহনীয় হয়ে আসছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন ছাড়া বন্দী সবাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত যাদের মুখ দেখা যায় তারাও বেরিয়ে এসেছেন কয়েদখানা থেকে। ধারণা করা হচ্ছিল, অন্তরালের কোনো সমঝোতা কিংবা সরকারের নতুন উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণার পরও পৌরসভা নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণে বিএনপির সম্মতি, এমনকি পৌরসভা নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এবং ২৩৪ পৌরসভার মধ্যে মাত্র ২৫টি চেয়ারম্যান পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হওয়ার পরও সেই নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেওয়ায় একটা ধারণা জনমনে জন্ম দিয়েছিল যে, আগাম একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সমঝোতার ভিত্তিতেই বুঝি সবকিছু এগুচ্ছে। বাড়াবাড়ি করলে ‘সমঝোতা’ ভেঙে যেতে পারে আশঙ্কায় বোধহয় বিএনপি সব মেনে নিচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও একই লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে পৌর নির্বাচনের মতো। প্রথম ধাপের ৭৩৮ ইউনিয়ন পরিষদের অর্ধশতাধিক চেয়ারম্যান পদে সরকারি দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী নেই; তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী! ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কথা কল্পনা করা যায়? বিএনপি অভিযোগ করেছে তাদের শতাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতেই দেওয়া হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে এমন অসংখ্য অভিযোগ করা হয়েছে। মনে হচ্ছে প্রতিপক্ষকে দারুণ ভয় পাচ্ছে শাসক দলের প্রার্থীরা। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা হেরে গেলে তো তা সরকারের প্রতিই ‘নো-কনফিডেন্স’ হয়ে যায়। তাই কি ভোটের আগেই ফলাফল নিশ্চিত করার উদ্যোগ? মিডিয়ায় এমন খবরও এসেছে যে, দলীয় মনোনয়ন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয়নপত্র পাওয়ার পরই অনেক জায়গায় উল্লাস হয়েছে। ভোটের আগে উল্লাসের অর্থ তো এভাবেই করা যায় যে, ভোটটা কেমন হবে এটা তারই আভাস। এরপরও বিএনপি নির্বাচনে আছে। নির্বাচনে থাকবে বলেই মনে হয়। যাই হোক, নির্বাচনে তাদের থাকা উচিত। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে দলকে সংগঠিত করার ভালো একটা সুযোগ নিতে পারে তারা। দলীয়ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিএনপিকেই অধিক সুবিধা দেবে দল গোছানোর কাজে। পনেরো সালের জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসের হটকারী কর্মসূচি দলের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও দুর্যোগে ফেলে দিয়েছিল। ঘরে থাকতে পারেনি অনেকে। নির্বাচন সামনে রেখে ধরপাকড় কমানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাড়িঘরে যেতে পারছে প্রায় সবাই। দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান, প্রতীকে না হলেও ওয়ার্ড সদস্যদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজটাও সেরে নিতে পারে দলটি। আনুষ্ঠানিকভাবে যদিও পুনর্গঠন কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে, পুনর্গঠনের কাজটা অন্তত গুছিয়ে রাখতে পারে। তবে পুনর্গঠন কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত ঘোষণার পেছনে তৃণমূল পর্যায়েও দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল স্পষ্ট হয়ে গেছে। নিয়মতান্ত্রিক ও গণতন্ত্রসম্মতভাবে যদি একটি রাজনৈতিক দল পরিচালিত না হয়, কর্মচারী দিয়ে যদি দল চালানো হয়, নিবেদিতপ্রাণ সত্, পরিশ্রমী ও যোগ্যরা যদি কাজের স্বীকৃতি ও মর্যাদা না পায়, পকেট কমিটি আর পদ-পদবি বেচা-কেনার যদি হাট বসে তাহলে সাংগঠনিক বিরোধ এক সময় তীব্র কোন্দলে রূপ নিতেই পারে। বিএনপি এখন সে সমস্যায় আক্রান্ত। আর এ সুযোগটিই বোধহয় নিচ্ছে সরকার। জাতীয় কাউন্সিলের ভেন্যুর ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার শক্তি, ক্ষমতা এখন বিএনপির নেই। বিএনপি এ শক্তি আহরণ করুক সরকার তা নাও চাইতে পারে তার স্বার্থে। নানা কৌশল প্রয়োগ করতে পারে। কাউন্সিলের জন্য ভেন্যুর অনুমতি এখনো পায়নি বিএনপি, কিন্তু তাদের কোনো ভেন্যুরই অনুমতি দেওয়া হবে না তেমন কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও পুলিশ কর্তৃপক্ষ বা ভেন্যু কর্তৃপক্ষ বা সরকার নেয়নি। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, অল্প সময়ের ব্যবধানে হয়তো অনুমতিটা পাবে বিএনপি; যাতে কাউন্সিলের ব্যানার পোস্টারসহ অন্যান্য প্রচারসামগ্রী নিয়ে বেশিদিন তারা সাংগঠনিক তত্পরতা চালাতে না পারে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে এমন সাংগঠনিক সফর নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব ফেলবে অবশ্যই। এ ধরনের সাংগঠনিক সফরে কেন্দ্রীয় নেতারা যখন জেলা-উপজেলায় যান, জেলা-উপজেলার নেতারা যখন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে যান, তখন নেতাকর্মীরা উদ্দীপ্ত-উজ্জীবিত হয়। সংগঠনের ভিত মজবুত হয়। এ সুযোগ না দেওয়ার জন্যই বিএনপিকে ভোগানো হচ্ছে। শাসকদল আওয়ামী লীগেরও কাউন্সিল প্রায় কাছাকাছি সময়ে! হওয়ার কথা ২৮ মার্চ। ইউপি নির্বাচনের কারণে তারিখ পেছানোর কথা ভাবছে দলটি। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে তারাও কিন্তু তৃণমূলে যাচ্ছে না। তাদের সংকট ভিন্ন। অভ্যন্তরীণ বিরোধ তাদেরও আছে। নিত্যই তো নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর আসে মিডিয়ায়। তাদের সংকটটার চরিত্র ভিন্ন। সেখানেও পকেট কমিটি, এমপি কমিটি, কেনা-বেচা কমিটির অভিযোগ আছে। সংকট আরও তীব্র হয়েছে হালুয়া-রুটির ভাগাভাগি নিয়ে। সরকারি দলে এসব সুযোগ-সুবিধা বেশি। ‘ভাইজান’ (নেতা) হতে পারলে এবং সেই ভাইজানের সঙ্গে থাকলে থানা-ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব সরকারি অফিস-দফতর আছে, যেখানে ‘বাণিজ্য’ ঠিকাদারি আছে সেখানে সমীহ পাওয়া যায়, পাওয়া যায় সুবিধা। ইউপি নির্বাচনের আগে পানি ঘোলা করতে চাচ্ছে না শাসকদল।

কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার বা ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা সিল মারামারির প্রয়োজন হলে সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া দরকার। কিন্তু জাতীয় কাউন্সিলের আগে থানা, ইউনিয়নের সম্মেলনের আয়োজন করলে যে তীব্র সাংগঠনিক বিরোধের সূত্রপাত হবে তাতে তৃণমূলে বহু খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যাবে দল। এর প্রভাব পড়বে ইউপি নির্বাচনে। তাই শাসক দল ঐক্যবদ্ধভাবে যাতে প্রশাসননির্ভর হয়ে ইউপি নির্বাচন সেরে নিতে পারে সে কৌশলই হয়তো নিয়েছে। সব শাসক দলেরই এ রকম ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা থাকে। সরকারদলীয় কোনো সিদ্ধান্ত মনঃপুত না হলেও তার বিরোধিতা করার সাহস সরকারি কর্মচারীদের থাকে না। কোনো সরকারের আমলেই আমাদের দেশে খুব একটা দেখা যায়নি এরশাদ আমলের কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। সেই আমলেও ভোটের বাক্স ভরার কাহিনী আছে।

কিন্তু বিএনপি করছে কী? বৃহত্তর কোনো বিষয়ে পর্দার আড়ালে কোনো সমঝোতা হলেও সবক্ষেত্রে সরকার তাদের ছাড় দেবে এমন প্রত্যাশা বিএনপি করবে কেন? এরশাদ আমলে বিএনপি যেভাবে বিরোধী দলের রাজনীতি করেছে সংসদের বাইরে থেকেও, আওয়ামী লীগ আমলে যে তা তত সহজ হবে না বিএনপির তো তা বোঝা উচিত। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে মির্জা গোলাম হাফিজ, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, শেখ রাজ্জাক আলী, কে এম ওবায়দুর রহমান, ব্যারিস্টার সালাম তালুকদার, আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার মতো ঝানু রাজনীতিবিদ, জেনারেল (অব.) মাজেদুল হক, কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান, কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের মতো কিছু অদম্য পুরুষ ছিলেন দলে যাদের কথা ও পরামর্শের মূল্য ছিল। শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলেও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, রাজ্জাক আলী, সালাম তালুকদার, মান্নান ভূঁইয়ার মতো প্রাজ্ঞ রাজনীতিকরা ছিলেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করতে পারতেন। এখনো ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ান দলে নেই তেমন নয়, তবে তাদের কণ্ঠ দুর্বল। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় যারা আছেন, তাদের ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অক্ষমতা দলের অনেক ক্ষতি করেছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। জাতীয় কাউন্সিল নিয়েও তারা কী করবেন বোধহয় বুঝতে পারছেন না। দলটি এখন যেন শুধুই ‘এলাহিভরসা’র দল। শুধু ‘ভেন্যু ভেন্যু’ নিয়ে ‘ব্রিফিংবাজি’ করছেন। পার্টি কাউন্সিল ঘিরে আরও অনেক সাংগঠনিক কাজ থাকে। সেসব কাজ বিএনপি করছে কই? বেশ কয়েকটি উপকমিটি করা হয়েছে। যারা খোঁজখবর রাখেন, তাদের অভিমত হচ্ছে ‘কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’-এর মতো কমিটি কাগজে আছে কাজে নেই। বড় বড় পদাধিকারী ‘জিন্দেগিতে’ ঢাকার বাইরে যাননি সংগঠনের কাজে। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্তরা অধিকাংশই কাজ সেরেছেন ঢাকায় বসে। কাউন্সিল উপলক্ষেও বাইরে যেতে অনেকের ভয়। হঠাত্ ভেন্যু পাওয়ার চিঠি হাতে এলে কী করবে বিএনপি? বিপুল জনসমর্থিত একটি দল রাজনীতি, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে শুধু ক্ষমতার কাঙ্গালিপনা আর মুষ্টিমেয় লোকের ‘অনৈতিক পন্থায় ভোগ-বিলাসের অবলম্বন হয়ে গেলে কী করুণ পরিণতি হয় বিএনপি তার একটি বাংলাদেশি উদাহরণ। দলটির ভাগ্য ভালো যে, এর জনসমর্থনে এখনো ভাটা পড়েনি। একমাত্র নেতৃত্বের ব্যর্থতার তা ক্যাশ করতে পারছে না। ওরা কেন এখনো ভাবছে না যে, বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হতে পারেন, অন্য সব নেতাকে ছেড়ে দিয়ে তাকে জেলে রেখে দেওয়া হতে পারে আইনি প্রক্রিয়াতেই। তারেক রহমানও দেশে আসতে পারবেন না অন্তত এ সরকারের আমলে। ডা. জোবায়দা এসে হাল ধরলে দলের ওপর বেগম জিয়ার পারিবারিক মালিকানা হয়তো অক্ষুণ্ন থাকবে, কিন্তু তিনি দল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দলের প্রবীণ-নবীনদের সমন্বয়ে একটি যৌথ বিকল্প নেতৃত্ব কাঠামোই দলটিকে রক্ষা করতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। তার আগে বিভিন্ন কমিটি ও পদ-পদবি এবং কোনো নির্বাচন এলে মনোনয়ন বেচা-কেনার পাইকারদের দল থেকে ঝেটিয়ে দূর করা উচিত বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। গুলশান অফিসের দরজা উন্মুক্ত করে দিলে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই এ পাইকারদের হদিস দিতে পারবেন। এ পাইকাররাই মহাসচিব পদসহ নানা বিষয়ে ক্লিকবাজি করছে বলে অভিযোগ দল সংশ্লিষ্টদের। বেগম জিয়া এবং তারেক রহমান কি কিছুই জানেন না এদের সম্পর্কে? এদের ছাঁটাই করে দিলে দলের উপরে নিচে এমনিতেই নিবেদিতপ্রাণ সত্-যোগ্যদের জন্য অনেক স্থান সৃষ্টি হয়ে যাবে। দল যদি গোছানো থাকে কাউন্সিল করার জন্য রাজধানীতেই ভেন্যু লাগবে কেন? রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল ঢাকার বাইরে হওয়ার নজিরও তো আছে। বিএনপি কি কাউন্সিল করতে সক্ষম, নাকি ভেন্যুর অজুহাতে কাউন্সিল বাদ দিয়ে উমেদার, তোষামোদকারীদের দিয়ে ‘উড়াল কমিটি’ করতে চাচ্ছে?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]


বিডি-প্রতিদিন/২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব

সর্বশেষ খবর