শিরোনাম
১ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:৪৪

করোনা প্রতিরোধে কেন জনবিচ্ছিন্নতা এত গুরুত্বপূর্ণ?

ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন

করোনা প্রতিরোধে কেন জনবিচ্ছিন্নতা এত গুরুত্বপূর্ণ?

ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন

মনটা ভাল নেই। বোধ হয় মানসিক সমস্যায় ভুগছি। নইলে কোথাও অনেক মানুষের ভীড় দেখলে কেন এত চমকে উঠি? কেন আমার ভয় করে? না, নিজের জন্য নয়, ভীড়ের ওই মানুষগুলোর জন্য। ওরা কি জানে না, এই মুহূর্তে ভীড়ের মধ্যে করোনাভাইরাস ঘোরাঘুরি করে?

থাক, এসব সিরিয়াস কথা বলে আর কী হবে? তারচেয়ে বরং একটা গল্প বলি। ‘হাওয়ায় ভাসি’ গ্রামের আক্কাস আলী সাহেবের একবার করোনাজনিত কোভিড অসুখ হলো। তাকে দেখতে দশজন মানুষ এলো। রোগীর সাথে হাত মেলালো, পাশে বসে ঘণ্টাখানেক আড্ডাও দিল। সেই দশজনের মধ্য ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাস ঢুকলো, তার মধ্যে দুই সপ্তাহের মধ্যে চারজনের কোভিড রোগ দেখা দিল। আক্কাস আলীর বাড়ি থেকে শরীরে করে যে চারজন করোনাভাইরাস নিয়ে এলো, তাদের কাছ থেকে পেলো আরও একুশ জন। এভাবে চক্রাকারে বাড়তে থাকলো কোভিড রোগীর সংখ্যা। পাঁচ সপ্তাহ পরে দেখা গেলো হাওয়ায় ভাসি গ্রামে কোভিড রোগীর সংখ্যা ৮৭ জন।

এবার ‘বুঝে চলি’ গ্রামের গল্প বলি। সেখানে মজিদ সাহেবের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস পাওয়া যাওয়ার পর থেকেই তিনি নিজেকে ঘরের একটা রুমে স্বেচ্ছা বন্দী করে ফেলেছেন। তিনি কারো সাথে দেখা করেন না, প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। সময় মত খাবার দরজায় রেখে যায়, তিনি নিয়ে খান। প্রায় সময় বই পড়েন, মাঝেমধ্যে টিভি দেখেন। এর মধ্যে হাল্কা জ্বর আর কাশি হল। দু’সপ্তাহ পরে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। সেই গ্রামে আর কারো শরীরে এখন পর্যন্ত আর করোনা আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। 

নভেল করোনা ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। উপরের গল্পে আমরা দেখলাম, স্পর্শের অভাবে ‘বুঝে চলি’ গ্রামে মজিদ সাহেবের শরীর থেকে ভাইরাসটি আর কারো শরীরে যেতে পারেনি। ফলে ওখানে আর কারো শরীরে এই ভাইরাসটি পাওয়া যায়নি। 

চীনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, প্রশাসন কী কঠোর ভাবে মানুষজনকে তাদের ঘরের ভেতরে থাকা নিশ্চিত করেছে। বাইরের সকল প্রকার জনসমাবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ফলশ্রুতিতে, দু’মাসের মধ্যেই তারা কোভিড-১৯ রোগের মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। হিসেবটা খুব সোজা। ভাইরাসটি যখন একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে যেতে পারবে না, তখন রোগও আর ছড়াবে না। যত বেশি মানুষের কাছাকাছি আসার সুযোগ থাকবে, তত বেশি করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। বাংলাদেশের মত দেশে তো এর কোন বিকল্পই নাই।

বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের সুযোগ খুবই সীমিত। এই মুহূর্তে প্রতিদিন একশ টেস্ট করার সামর্থ্য আছে বলে মনে হয় না। যদি কোভিড-১৯ রোগটি ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। তবে যেহেতু করোনা পরীক্ষার তেমন সুযোগ সেই, সেহেতু আমরা হয়তো জানবোও না, কোভিড কি না? এই বাস্তবতায়, আমাদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র  হলো জনবিচ্ছিন্নতা। নতুন নতুন মানুষ না পেলে ভাইরাস কাকে আক্রমণ করবে? আর আক্রমণ করতে না পারলে তো অসুখও আর ছড়াবে না। এভাবে দ্রুততর সময়ে নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে ভাইরাসের সংক্রমণ। সংক্রামক ব্যাধির সংক্রমণ রোধে এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি। 

এখন কথা হলো, আমরা এর গুরুত্ব বুঝব কী না এবং বুঝলেও পালন করব কি না? সরকার চাইলে আইনের প্রয়োগ করেও জনবিচ্ছিন্নতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর