২৬ জুন, ২০২০ ০৯:৫৯

করোনা হলো উছিলা

আবু তাহের খোকন

করোনা হলো উছিলা

পৃথিবীতে যখন মানুষের মধ্যে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, উগ্রতা, ক্রোধ, অশ্লীলতা, নাফরমানি, পাপাচার, ব্যভিচার বেড়ে যায়। যখন ঈশ্বরকে ভুলে গিয়ে নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে শুরু করে। তখন ঈশ্বর মানুষকে তার সীমার কথা মনে করিয়ে দিতে ভয়ানক বিপদ দেন। সুনামি, ভূমিকম্প আর মহামারীর মতো ভয়াবহ ঘটনা দিয়ে মানব জাতিকে সতর্ক করেন। করোনাভাইরাস হয়তো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসা তেমনই একটি সতর্ক বার্তা!

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, ''জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের কারণে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা নাফরমানি থেকে ফিরে আসে।'' (সুরা রুম, ৩০:৪১) কোরআনে তিনি আরও বলেছেন, ''তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন।'' [সূরা আশ-শুরা (৪২):৩০]

সুতরাং, করোনাভাইরাস মানুষের কর্মেরই ফল। আল্লাহ তাআলা হয়তো সিরিয়ার সেই তিনবছরের বালকের নালিশ শুনে শাসন করে বুঝাতে চেয়েছেন, তোমরা যা করেছ তা ঠিক নয়। কাশ্মীরের মেয়েদের কান্না শুনে তাদের বদদোয়া হয়ত কবুল করেছেন। আরাকানের মুসলিমদের কান্না হয়ত তাঁর দরবারে পৌঁছে গেছে। হয়ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদিদের জুলুম সীমা ছাড়িয়ে গেছে। হয়ত পৃথিবীর মানবিকতাবোধ লোপ পাওয়ায় সতর্ক করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস পাঠিয়ে আল্লাহ তাআয়া হয়ত বুঝাতে চেয়েছেন, যত যাই কর তোমরা তো কেবল ক্ষুদ্র দুর্বল মানুষ ছাড়া আর কিছু নও।
 
পারমাণবিক অস্ত্র, টিএইচএএড, এসিউ-৩৪, হাইপারসনিক বিমান বানাতে পার। এগুলো দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যূর মুখে ঠেলে দিতে পার। বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পার। দ্রুতগতির রকেটে চড়ে যেতে পার মহাকাশে। চাঁদেও যেতে পারব। হয়ত মহাকাশের আরও অনেক গ্রহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পার। কিন্তু অতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাস যা খালি চোখে দেখা যায় না, অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে যার পরিমাপ করতে হয়; তাকে প্রতিহত করবার শক্তি বা ক্ষমতা তোমাদের নাই। আসলেই মানুষের খুব বেশি শক্তি নেই। মানুষ বড় অসহায়। আল্লাহ তাআলা তাকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন। মানুষ কখনো সাধ্যাতীত কিছু করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা যেমন কোরআনে বলেছেন, ''হে জ্বিন ও মানবজাতি, যদি তোমরা আসমানসমূহ ও জমিনের সীমানা থেকে বের হতে পার তাহলে বের হও। কিন্তু তোমরা তো (আল্লাহর দেয়া) শক্তি ছাড়া বের হতে পারবে না।'' [সূরা আর রাহমান, আয়াত: ৩৩] মানুষ তার নির্দিষ্ট সীমার বাইরে সত্যিই যেতে পারে না।

আমাদেরকে আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। কিয়ামাতের আলামতের অনেক কিছুই এখন পৃথিবীজুড়ে দেখা যায়। কিয়ামাত কবে হবে তা কেবল আল্লাহ তাআলাই জানেন। কিন্তু আমাদেরকে এখনই সতর্ক হতে হবে। আনাস রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীস আছে। যেখানে রাসুল (স.) বলেছেন যে, ''কিয়ামাতের কিছু আলামত হল, জ্ঞান কমে যাবে। অজ্ঞতা প্রসার লাভ করবে। মদপান বৃদ্ধি পাবে। ব্যভিচার বেড়ে যাবে।'' (সহীহ বুখারী, হাদীস নম্বর: ৮০, ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রকাশিত)। এসব আলামত তো এখন পৃথিবীর চারদিকেই দেখা যায়। আল্লাহ তাআলা হয়ত মানুষকে আরও একবার সতর্ক করতে চাচ্ছেন!

হয়তো তাই হবে। মানুষের দীর্ঘ দিনের পাপ, নিষ্ঠুর অত্যাচার, সিরিয়ার সেই তিনবছরের বালকের ক্ষত-বিক্ষত শরীরের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ তাআলা হয়ত মানুষকে শিক্ষা দিতে চাচ্ছেন! আল্লাহ তাআলা হয়তো মানবজাতিকে শাস্তি দিতেই ''করোনা ভাইরাস'' পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমে মানুষকে করলেন গৃহবন্দ্বী। কোয়ারেনটাইনড। মানবজাতিকে পাপমুক্ত করতে তিনি হয়তো কিছুদিন সময় নিবেন। মানুষের এই গৃহবন্দ্বী থাকার সময়টাতে প্রকৃতি খুব খুশি। পরিবেশ দূষণমুক্ত হচ্ছে। মানুষ প্রকৃতির উপর কতোটা অত্যাচার করেছে স্বল্প সময়ে প্রকৃতির পরিবর্তন দেখেই তা বুঝা যায়। সমুদ্রের পানি এখন অনেক পরিষ্কার। আকাশ নীল। গাছে গাছে সবুজ পাতা। ডালে ডালে নানান ফুল। বিশুদ্ধ বাতাস। প্রকৃতি খুশি হয়েছে। পরিবেশ দূষণমুক্ত হয়েছে। যদিও করোনাভাইরাসের শুরুতে ভয় আর আতঙ্কে বাঁচার জন্য মানুষ আর্তনাদ করেছে। কিন্তু মানুষ আবার নিজ চরিত্রে ফিরেছে। যুদ্ধ থামছে না। কোথাও ধর্ম যুদ্ধ, কোথাও আধিপত্যের। করোনাভাইরাসের মধ্যেও সৌদি প্রতিনিয়ত ইয়েমেনে বোমা মারছে। থেমে নেই সেই তিনবছরের বালকের দেশ সিরিয়ারও। চলছে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের আগ্রাসন। ভয়ঙ্কর করোনার মধ্যেও চলছে কাশ্মীরে হত্যা, ধর্ষণ আর নির্মম নির্যাতন। ভারতজুড়েই চলছে দাঙ্গা। মুসলিমদের উপর বাড়ছে নির্যাতন। করোনার চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দিচ্ছে না। চীনের সাথে ভারতের আধিপত্যের বিবাদ যোগ হয়েছে নতুন করে। করোনা হয়ত একদিন শেষ হবে। কিন্তু মানুষ কি মানুষ হবে? না কি আরও অমানুষ হবে?

লেখক: ফটোসাংবাদিক

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর