১ অক্টোবর, ২০২০ ১২:৫৫

আর কত নির্বাক থাকবে সমাজ!

হাসিনা আকতার নিগার

আর কত নির্বাক থাকবে সমাজ!

হাসিনা আকতার নিগার

ধর্ষণ, ধর্ষিতা, ধর্ষক-এ শব্দগুলো লিখতে গেলে কলম থমকে যায়। পাহাড় থেকে সমতলে একের পর এক নারী নির্যাতিত হয়েছে। আর দেশ তা দেখছে ভাষাহীন হয়ে। ঘটনার পর মামলা, আন্দোলন, সমালোচনার ঝড় সবই অতীতের আর সব ঘটনার মত হচ্ছে। এমনকি নারীর প্রতি বীভৎস অত্যাচারকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে তর্ক বির্তকের অন্ত নেই। কিন্তু একজন ধর্ষকের একমাত্র পরিচয় সে জঘন্যতম অপরাধের অপরাধী। তার দায় আর কারো হতে পারে না। পিতামাতা কোন ধর্ষকের  জন্ম দেয় না। সন্তান যখন কুলাংগার হয় তার দহন বাবা মা বুঝতে পারে কেবল। পরিতাপের বিষয় হলো দেশের আইনে ধর্ষণের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থাকা সত্ত্বেও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে তার উত্তর বা সমাধান পাওয়া খুব মুশকিল। ধর্ষণ শব্দটি এ সমাজের ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। কারণ মানুষের নৈতিক অবক্ষয়কে আইন দিয়ে কেবল সংশোধন করা যায় না। এর জন্য নিজের ভেতরের বোধশক্তিটা জাগ্রত করতে হয়। তা না হলে  প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতন ও ধর্ষণের স্বীকার হবার শংকায় ভুগবে। আর সমাজ নির্বাক হয়ে দেখবে কেবল।    

নারী জীবনের নিশ্চয়তার জন্য আইন যত শক্তিশালী হোক, ব্যক্তি সমাজের পরিবর্তনটা দরকার সবার আগে। আর এ পরিবর্তনের জন্য সচেতনতাটা খুব জরুরি। সচেতনতা নেই বলে ধর্ষণের সাজা কঠিন জেনেও প্রতিনিয়ত নারী ধর্ষিত হচ্ছে। 

এর অন্তরালের  কারণ ব্যক্তি দৃষ্টিতে কু-রিপুকে সংযত করার চর্চা কমছে।  ভালো মন্দ বুঝার বিবেক বোধ যার থাকে সে পারে না ব্যভিচার  করতে। শারীরিক চাহিদা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্ত সে চাহিদা মেটানোর জন্য  ধর্ষণের মত বর্বরোচিত কাজ বনের পশুকে হার মানায়।  

এ সূক্ষ্ম বোধগুলো জাগ্রত করতে হলে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধের সাজা মৃত্যুদণ্ড  হবার পরেও থামছে না এ অপকর্ম। তার কারণ আইনী জটিলতাতে বিচার প্রলম্বিত হয়। আর এতে ধর্ষক মনে করে তার এ অন্যায় থেকে বাঁচার পথ আছে। এমন ধারণা সমাজে যে বিষ ছড়াচ্ছে তা বুঝাতে হবে। আর এর জন্য সচেতনতার বিকল্প কোন নেই।    
                     
একসময় মানুষ মেয়ে সন্তান চাইত না কুসংস্কার থেকে। আর এখন সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় মেয়ে সন্তান মানে পরিবারের জন্য সার্বক্ষণিক চিন্তা। মেধা মননে এগিয়ে যাওয়া নারীকে এখনো ভোগ্যপণ্য হিসাবে একটি দেহ হিসাবে চিন্তা করার মানসিকতা বদলাতে পারিনি এ সমাজ।
 
সে জন্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে সাময়িকভাবে সোচ্চার হয় থেমে গেলে চলবে না।ধর্ষণের প্রতিরোধ করতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের মুখ্য দায়িত্ব সচেতনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। কেবল আইন দিয়ে ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধকে দমন করা সম্ভব নয়। তাই সমাজের সবাইকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে নৈতিকভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করত। তবেই দেশ থেকে  ধর্ষণ শব্দটি মুছে দিয়ে নারীকে নিরাপদ জীবন দিতে পারবে সমাজ।

লেখক- কলামিষ্ট 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর