১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৮:৪২

১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গুন্ডা বাহিনীর হাতে নিহত হন বসুনিয়া

আনোয়ার হোসেন মুকুল

১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গুন্ডা বাহিনীর হাতে নিহত হন বসুনিয়া

আনোয়ার হোসেন মুকুল

১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে সূর্য সেন হলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভা আয়োজনের দায়িত্ব ছিল বাসদ ছাত্রলীগের। আমরা সন্ধ্যা থেকেই রুমে রুমে যেয়ে মিটিংয়ে আসার জন্য সবাইকে বলতে থাকি। রাত সাড়ে ৮টা ৯টার দিকে বসু ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয় হলের ভিতরে। আমাকে জিজ্ঞেস করে রানা হামিদ কোথায়? আমি বলি সামনে যান রানা ভাই আর শফি ভাই সামনেই বসে আছে। 

আমাদের কারো এক জনের রুমে ডিমের তরকারি আর ভাত রান্না হয়েছিল, সেখানে আমারও খাওয়ার কথা তাই বসু ভাইকে বলি ভাই মিটিংয়ে, দেরি আছে ডিমের তরকারি দিয়ে ভাত খাবেন? তিনি না বলে গেটের বাইরে চলে যান। যথারীতি সভার প্রস্তুতি চলাকালে আমি উনাদের কাছে গেলে শফি ভাই বলেন তার ঠাণ্ডা লেগেছে। আমি বললাম তাহলে সিগারেট খাচ্ছেন কেন ? আমার উদ্দেশ্য ছিল তার হাতে থাকা সিগারেটের বাকি অংশটায় ভাগ বসানো। সে রাতের সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন আমাদের বাসদ ছাত্রলীগের হল শাখার সভাপতি কামিদ হায়দার।

নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখার পর এরশাদের উপজেলা নির্বাচন বন্ধসহ আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি বটতলার জমায়েতে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে আমরা স্লোগান দিতে দিতে মহসিন হল পার হয়ে সামনে এগুতে থাকি। সংখ্যায় ৩০/৩৫ জন ছিলাম। মিছিলের সামনে ছিল শফি আহমেদ, রানা হামিদ রাউফুন বসুনিয়া আশরাফুল হক মুকুল ও অন্যান্যরা। মহসিন হল পার হতেই শফি ভাই দ্বিতীয় সারিতে এসে দুই একবার স্লোগান দিতেই তার গলা বসে যায়। তারপর বসু ভাই জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো বলতেই তার গলার স্বরও দুর্বল হয়ে যায়। সাধারণত প্রায় সব মিছিলে আমি অন্যান্যদের সাথে স্লোগান দিতাম। খানিকটা লজ্জায় আমি বসু ভাইকে বলি ভাই আপনে সামনে যান আমি স্লোগান ধরছি। তখন আমি স্লোগান ধরি দ্বিতীয় সারি থেকে।'' জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো, খুনি এরশাদের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবনা''। 

ততক্ষণে মিছিলটা বড় রাস্তায় উঠে গেছে। একটা হুন্ডা সামনে দিয়ে খুব জোরে শব্দ করে এফ রহমান হলের দিকে চলে গেল। ঠিক তখন সামনের সারিতে পাশাপাশি ছিলেন বসু ভাই, শফি ভাই ও রানা হামিদ ভাই। তারপরই এফ রহমান হলের সামনে গাছের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ একজন গুলি করেছিল। ধুপ করে একটা শব্দ শুনেছিলাম। নিচু হয়ে তাকিয়ে দেখি বসু ভাই। তাজা রক্তে ভিজে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ঢেকে গেছে চোখ আর কপাল। আমাদের প্রিয় বসু ভাই বাকশাল সমর্থিত জাতীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক।

আজ এতো বছর পর পেছনে ফিরে তাকালে সেই সব সোনালী অতীতের অগ্নিঝড়া দিনগুলোর কথা খুব মনে পরে। কি স্বপ্ন নিয়েই না সেদিন গুলির মুখে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। স্বপ্নগুলো অধরাই রয়ে গেল। তারপরও আশা রাখি একদিন আমাদের সোনালী তারুণ্য আমাদের চেয়েও আরও সাহস নিয়ে এই মাটিতেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে সেই দিনের দিনের অপেক্ষায় আছি। তারুণ্যের জয় হবেই। আজকের এই দিনে রাউফুন বসুনিয়ার সাহসী স্মৃতির প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা। বসু ভাই সবাই আপনাকে ভুলে গেলেও আমরা আপনাকে ভুলি নাই। আমাদের ক্ষমা করবেন ভাই।

লেখক: কানাডা প্রবাসী সাবেক ছাত্রনেতা এবং সদস্য, নাগরিক ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটি।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

সর্বশেষ খবর