১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০৭:৪০

অন্ধত্ব চোখে থাকে না, মানুষের চিন্তায় থাকে

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

অন্ধত্ব চোখে থাকে না, মানুষের চিন্তায় থাকে

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

অন্ধভক্তি মানুষের চিন্তা শক্তিকে অন্ধ করে দেয়। অন্ধত্ব চোখে থাকে না, মানুষের চিন্তায় থাকে। তখন মানুষের নিজের মাথাটা নিজের হাতে থাকে না, অন্যের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সে চিন্তার অন্ধত্ব মানুষকে ক্রীতদাস বানায়। মানুষের নিজের চিন্তাশক্তিকে কেড়ে নিয়ে অন্ধকার চিন্তাশক্তি দ্বারা মানুষকে পরাধীন করে। সেখানে যুক্তি তর্ক বলে কিছু থাকে না। বিজ্ঞানের জ্ঞান থাকে না। এই বিষয়টাকে অনেকটা পুতুল নাচের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। 

এক সময় মানুষের অদৃশ্য আঙুলের নিপুণ কারুকাজে বোবা পুতুলগুলো নাচতো। মানুষ যেভাবে চাইতো সেভাবে পুতুলগুলো আছাড়ি-বিছাড়ি করে নেচেছে। সময়ের বিবর্তনে ইতিহাসের পাতায় পুতুলগুলো হারিয়ে গেছে। ঠিক তার উল্টোপিঠে মানুষ ক্রমাগত তার ব্যক্তিসত্তা হারিয়ে পুতুলের ভাগ্য বরণ করেছে। মানুষকে অন্ধ করে দেবার অদ্ভুত খেলায় নামে মানুষ। যে মানুষটা এই খেলায় নামে সে জানে তার গন্তব্যটা কোথায়। কিন্তু যে মানুষটা চিন্তার অন্ধত্ব বরণ করে সে জানে না তার কোনো গন্তব্য আছে কিনা। সেটা জানার মতো যে শক্তিটা থাকা দরকার সে শক্তিটাই তো অন্যের হাতের সুতোর টান হয়ে যায়। মানুষ যখন তার মধ্যে নিজের ছায়া না দেখে অন্যের ছায়া দেখে তখন মানুষের উপর সেই অন্য ছায়াটা ভর করে। মানুষের ভিতরের মানুষটাকে খেয়ে ফেলে। তখন আর মানুষটা সে থাকে না অন্য একটা মানুষ হয়ে যায়। 

একটা প্রাণহীন জড় পদার্থ হয়ে যায়। অন্ধভক্তি অন্ধ বিশ্বাসের জন্ম দেয়। মানুষ তখন আর সত্যকে দেখতে পায় না, সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দের বিচার করতে পারে না। যে মানুষেরা তার প্রভু হয় তারা যেভাবে দেখায় অন্ধ মানুষেরা সেভাবে দেখে। সেভাবে চিন্তা করে। মানুষ মানুষের প্রয়োজনে মানুষকে তার অন্ধভক্ত বানায়। তার কপালে অদৃশ্য আগুনে পোড়া একটা ছোপ ছাপ কাঁচা ঘা ক্রীতদাসের চিহ্ন  হিসেবে এঁকে দেয়। ক্রীতদাস প্রথা এখনও  ইতিহাস হয়নি বরং অন্ধভক্তির নামে ক্রীতদাস প্রথার খেলা তো এখনও চলছে। সে খেলায় মানুষের প্রভুত্ব অন্ধ মানুষদের উম্মাদ বানায়, উন্মাদনা তৈরি করে। পুড়ে ছারখার করে দেয় সভ্যতাকে। অক্টপাসের মতো গলাটিপে ধরে উন্নত চিন্তার। উদার মনোভাবের। অনেক ভালো ভালো কিছু করে দিবে বলে যারা মুখোশ পড়ে থাকে তাদের ভালোত্বের পিছনের মন্দত্বটা উন্মোচন করাটাও দরকার। কারণ বেশি ভালো ভালো না। 

যেখানেই ভালোত্বের অভিনয় সেখানেই মানুষের বিবেচনাবোধের শক্তির উম্মেষ ঘটানোটা খুব প্রয়োজন। মানুষের ভালোত্ব করার নামে যারা মানুষের সতীত্ব কেড়ে নেয় তারাই তো স্বার্থপর। স্বার্থপররা তাসের পর তাস সাজায়, দাবার গুটির একটার পর একটা উলোট পালট করে চাল দেয়, তারপর আস্তে আস্তে করে মানুষের ভিতর থেকে মানুষটা বের করে এনে তার মাথাটা রেখে দেয়। সে মাথাটাতে আর কিছুই থাকে না সে মাথাটা যে অতি আনুগত্যে বিক্রি হয়ে যায়। সেটাকে মগজ ধোলাই বলাটাই তখন যুক্তিযুক্ত হয়ে উঠে।

এমনটা তো আমরা চাই না। আমরা মানুষ চাই। মানুষের ভিতরে সব সময় জেগে থাকা মানুষ। যে মানুষ আপন শক্তিতে জেগে উঠবে। নিজের চিন্তার শক্তির শেকড়কে ধরে হাটবে আর প্রাণ খুলে গেয়ে উঠবে জীবনের জয়গান ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান। সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ। মুক্ত করো ভয়, আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।’

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর