২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:৪৩

গুমের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে

ড. সেলিম মাহমুদ

গুমের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে

ড. সেলিম মাহমুদ

বাংলাদেশে গুমের রহস্য একে একে উন্মোচিত হচ্ছে। নিজের মা’কে অন্যত্র লুকিয়ে রেখে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে মরিয়ম মান্নান নামে এক তরুণীর অবিশ্বাস্য অভিনয় দেখলো পুরো জাতি। এই মেয়েটি স্কুল ছাত্র আন্দোলনের সময়ও একই রকমের অভিনয় করেছিল। ২০১৮ সালে তার সরকার বিরোধী বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ গণমাধ্যমে আজ আবার দেখলাম। তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, সরকার বিরোধীদের এজেন্ট হিসেবেই সে কাজ করে আসছে।

গত কয়েকদিন আগে ভারতের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, বাংলাদেশে গুম হয়ে যাওয়া ৭৬ জন মানুষের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে দুইজন ব্যক্তি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং তারা ভারতের আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত। পরবর্তীতে এই খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এই তালিকায় এই দুইজন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে গুমের ভিক্টিম হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় এটি পরিষ্কার, যারা এই ধরনের তালিকা তৈরি করছে এবং বাংলাদেশে তারা যাদের তথ্যের উপর নির্ভর করে এই তালিকা তৈরি করছে, সেই তথ্য সরবরাহকারীরা নিরপেক্ষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়। তারা একটি পক্ষকে প্রতিনিধিত্ব করে অর্থাৎ তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী বা বর্তমান সরকার বিরোধী। তারা বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই কাজ গুলো করে যাচ্ছে। এই ধরনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এই ধরনের কাজের জন্য পৃথিবীর দেশে দেশে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে। এই সুনির্দিষ্ট ঘটনায় বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের রিসার্চ ফাইন্ডিংস এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটি অবশ্যই তাদের জন্য সুখবর নয়। 

গত মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার এবং চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল বেশেলেট ও তার টিমকে আমরা এই কথাটিই বলেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে মানবাধিকার বিষয়ে যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তাদের তথ্যের উৎস হিসেবে গ্রহণ করছে, তারা নিরপেক্ষ নয়। বাংলাদেশে তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত। কেবল মাত্র সরকার বিরোধী পক্ষের তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই ধরনের রিপোর্ট প্রস্তুত করা শুধু অপেশাদারিই নয়, এটি নিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করার শপথের লঙ্ঘন। এটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্ম পরিধি বা টার্ম অফ রেফারেন্সে উল্লিখিত বিধানাবলীরও লঙ্ঘন।

৭৬ জনের এই তালিকায় বেশ কিছু ব্যক্তি আছে যারা বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তালিকার কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা নানা কারণে বহু দিন ধরেই নিখোঁজ। বাংলাদেশে নানা কারণে কিছু ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। পথভ্রষ্ট তরুণী মরিয়ম মান্নানের মায়ের ঘটনাটি জাতির সামনে উম্মোচিত না হলে নিশ্চয়ই এই তরুণীর মায়ের নামও গুম হয়ে যাওয়া মানুষদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতো। মরিয়ম মান্নান গত কয়েকদিন গণমাধ্যমে তার মায়ের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে অনেক আহাজারি করেছে। তারপর গুম হওয়ার পর তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে এটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহকে নিজের মায়ের মরদেহ হিসেবে ঘোষণা করেছে এই মরিয়ম মান্নান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুসন্ধানে তার মায়ের আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি উন্মোচিত না হলে এই তরুণী ইতোমধ্যে তার মায়ের মৃত্যুর জন্য প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর পাশাপাশি সরকারকেও তার মায়ের ‘হত্যার’ জন্য দায়ী করে মানববন্ধনসহ অন্যান্য কর্মসূচি দিতো। সেই কর্মসূচিতে নিশ্চিতভাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম সশরীরে গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে ভন্ড অভিনেত্রী মরিয়ম মান্নানের পাশে দাঁড়িয়ে তার মায়ের 'গুম এবং হত্যার' জন্য চোখের পানি ফেলতো এবং এই ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করতো। 

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বিএনপি জামাতের এজেন্ট মরিয়ম মান্নানের মতো আরো অনেক ঘটনা এভাবে আমাদের সামনে উম্মোচিত হবে। "Ye shall know the truth, and the truth shall make you free."

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

সর্বশেষ খবর