যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি নাজমা খানম ঝর্না হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার ইয়নাথন গালভেজ-মারিন (২২) ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এই যুবক নাজমার এলাকাতেই থাকেন।
গত ৩১ অাগস্ট রাতে বাঙালি অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যামাইকা এলাকায় নিজের বাসার কাছে হামলার শিকার হন নাজমা (৬০)। তার বোনের এক ছেলে হুমায়ুন কবির নিউ ইয়র্কে পুলিশ বিভাগে কাজ করেন।
ধর্ম কিংবা জাতিগত বিদ্বেষ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে নাজমার স্বজনরা ধারণা করে আসছিল।
হত্যাকাণ্ডের পর খুনি ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। শনিবার গালভেজ-মারিনকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয়।
পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''নাজমা তার টাকার ব্যাগ দিতে না চাওয়ায় তাকে ছুরিকাঘাতের কথা স্বীকার করেছে গালভেজ-মারিন।''
যে স্থানে হামলা হয়েছে, সেই সড়কেই এই যুবকের বাসা। সেখান থেকে দুই ব্লক পরই নাজমার বাসা।
গালভেজ-মারিনের বিরুদ্ধে হত্যার পাশাপাশি ছিনতাই ও অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এই যুবকের বিরুদ্ধে এর আগে কোনো অপরাধের অভিযোগ ছিল না।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, নাজমার বুকে উপর্যুপরি আঘাত করে ঘাতক। এক পর্যায়ে ছুরি ভেঙে যায়। ছুরির ভাঙা ফলা তার শরীরে চার ইঞ্চি পর্যন্ত গেঁথে ছিল।
শুক্রবার জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে জানাজার পর রাতে বাংলাদেশে পাঠানো হয় নাজমার মরদেহ।
১০ বছর আগে ডিভি লটারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজমা। তার স্বামী শামসুল আলমও সে সময় শরীয়তপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে একজন নিউ ইয়র্কে থাকেন; বাকি দুই ছেলে-মেয়ে থাকেন বাংলাদেশে।
গত বুধবার রাতে নাজমা খানম ও তার স্বামী সামছুল আলম খান কুইন্সের জ্যামাইকা এলাকার বাসায় ফিরছিলেন। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় স্ত্রীকে এগিয়ে যেতে বলেন সামছুল আলম। এর কিছুক্ষণ পর স্ত্রীর চিৎকার শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন নাজমা খানম। হাসপাতালে নেয়ার পরে তার মৃত্যু হয়।
রবিবার সন্ধ্যায় নাজমা খানমের মরদেহ শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছায়। সেখানে উপস্থিত তার স্বজন, সহকর্মী ও প্রিয় শিক্ষার্থীরা তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন শতশত নারী পুরুষ। শ্রদ্ধানিবেদন শেষে পৌর ঈদগা মাঠে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় তার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর রাত সাড়ে ৮টায় আটিপাড়া ঈদ গা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ